Apan Desh | আপন দেশ

নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা দেশকে সংকটে ফেলছে: মির্জা ফখরুল

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৮:৫৪, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫

নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা দেশকে সংকটে ফেলছে: মির্জা ফখরুল

ছবি: আপন দেশ

নির্বাচন থেকে মানুষকে দূরে রাখার রাজনীতিই দেশকে বর্তমান সংকটে ফেলেছে। এ মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, গত ১৫ বছরে মানুষের মনে নির্বাচন নিয়ে অনীহা তৈরি করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) বিকেলে এক নির্বাচনী সংলাপে অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। 

তিনি বলেন, গত ১৫ বছরে দেশে এমন একটি অবস্থা তৈরি করা হয়েছে, যেখানে নির্বাচন থেকে দূরে থাকতে পারলেই মানুষ যেন বেঁচে যায়-এমন মানসিকতা গড়ে উঠেছে। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার যে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছিল, দুর্ভাগ্যজনকভাবে সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহে সে সুযোগও প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, গত কয়েক মাসে, বিশেষ করে সাম্প্রতিক কয়েক দিনের ঘটনায় মানুষ নতুন করে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। জনগণের মধ্যে আবার প্রশ্ন তৈরি হচ্ছে-নির্বাচন আদৌ হবে কি না। দুর্ভাগ্যজনকভাবে দেখা যায়, যখনই একটি সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত হয়, তখনই কিছু মহল ও কিছু ঘটনা সে সম্ভাবনাকে বিনষ্ট করে দেয়।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, বিএনপি শুরু থেকেই নির্বাচনের ওপর জোর দিয়ে এসেছে। এ কারণে অনেক সময় বিএনপিকে কটাক্ষও করা হয়েছে, দলটি শুধু ক্ষমতায় যেতে চায়। কিন্তু বাস্তবতা প্রমাণ করেছে, নির্বাচন বিলম্বিত হওয়ার কারণেই নানা অনিশ্চয়তা ও অস্থিরতা তৈরি হয়েছে, নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।

আরও পড়ুন>>>জমিয়তে উলামায়ে ইসলামকে ৪ আসনে ছাড় বিএনপির

মির্জা ফখরুল বলেন, নির্বাচনের মাধ্যমেই রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নেয়ার অভিজ্ঞতা বিএনপির রয়েছে, সে কারণেই দলটি নিজেকে একটি দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে মনে করে।

তিনি আরও বলেন, ২০১৬ সালে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ‘ভিশন ২০৩০’ উপস্থাপন করেছিলেন। সেখানে রাষ্ট্রের রাজনৈতিক কাঠামো সংস্কার, ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং নারী ক্ষমতায়নের বিষয়গুলো স্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয়েছিল। আজ যে সংস্কার বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, তার অনেকটাই সেই ভিশনে অন্তর্ভুক্ত ছিল।

মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রামের সময় বিএনপি চরম নির্যাতনের শিকার হয়েছে। প্রায় ৬০ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা, প্রায় ২০ হাজার নেতাকর্মী হত্যার শিকার ও ইলিয়াস আলীসহ প্রায় ১৭০০ নেতাকর্মীর গুমের ঘটনা ঘটেছে। এত নির্যাতনের মধ্যেও বিএনপি রাষ্ট্র সংস্কারের প্রস্তাবনা থেকে সরে আসেনি।

বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, বিএনপি প্রথমে ১০ দফা, পরে ২৭ দফা ও আন্দোলনরত অন্যান্য দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে ৩১ দফা প্রণয়ন করে জাতির সামনে তুলে ধরে। এ ৩১ দফার মধ্যেই সংবিধান সংস্কার কমিশন গঠন, জাতীয় ঐক্য ও সম্প্রীতি কমিশন প্রতিষ্ঠা, নির্বাচনকালীন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন, ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর শক্তিশালীকরণের প্রস্তাব ছিল।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার প্রস্তাবের ব্যাপারে তিনি বলেন, এক সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার প্রস্তাব নিয়ে বিএনপিকে বিদ্রুপ করা হলেও বাস্তবে প্রমাণ হয়েছে-বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্য এটি সবচেয়ে কার্যকর ব্যবস্থা। একই সঙ্গে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধন, নির্বাচন কমিশন ও নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কার ও সকল সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার ওপর জোর দেন তিনি।

দেশের অর্থনীতি প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, বিগত বছরগুলোতে দেশের অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস করা হয়েছে, একটি গোষ্ঠীকেন্দ্রিক লুটপাটের ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। এর ফলে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা ক্রমেই কঠিন হয়ে উঠেছে।

বাজারে নিত্যপণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণ একদিনে সম্ভব নয় জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, বিএনপি অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে একটি পূর্ণাঙ্গ পরিকল্পনা তৈরি করেছে।

‘অতীতে বিএনপি সরকার পরিচালনার সময় ভ্যাট ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন কাঠামোগত সংস্কার বাস্তবায়ন করা হয়েছিল। যা পরবর্তীতে দেশের রাজস্ব ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করেছে। সে অভিজ্ঞতার ভিত্তিতেই বিএনপি বিশ্বাস করে, সঠিক পরিকল্পনা ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার মাধ্যমে পাঁচ বছরের মধ্যে দেশকে একটি স্থিতিশীল অবস্থায় নিয়ে যাওয়া সম্ভব।’

আপন দেশ/এমবি

মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

সম্পর্কিত বিষয়:

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

Advertisement

জনপ্রিয়