Apan Desh | আপন দেশ

বাসসের দুর্নীতি-এমডিকে-রুখবে কে? সাংবাদিক সংগঠনের উদ্বেগ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২১:০১, ২৭ মে ২০২৫

আপডেট: ২২:২৬, ২৭ মে ২০২৫

বাসসের দুর্নীতি-এমডিকে-রুখবে কে? সাংবাদিক সংগঠনের উদ্বেগ

ছবি: আপন দেশ

অনলাইন পোর্টাল বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা। যা বিএসএসনিউজ নামে পরিচিত। এটি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কালাম আজাদ। পলাতক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রেস সচিবও ছিলেন তিনি। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির বিস্তর অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। যার তদন্ত করছে দুর্নীতি দমন কমিশন দুদক। ইতোমধ্যে ফাইলপত্র তলব করা হয়েছে।

এদিকে জুলাই-আগষ্ট গণঅভুত্থানের পর বাসসে চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগ দিয়েছে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। চেয়ারম্যান নিযুক্ত হয়েছেন সাংবাদিক আনোয়ার আলদীন। তার আগেই এমডি নিযোগ করা হয়েছে মাহবুব মুর্শেদকে। অভিযোগ উঠেছে পদে বসেই এমডি মুর্শেদ অতীতের অনিয়মকে ধামাচাপা দেয়ার অপকৌশল গ্রহণ করেছেন। একই সঙ্গে গত দেড়যুগ ধরে সংস্থাটিতে বঞ্চিত কর্মকর্তা, সাংবাদিক ও কর্মচারীদের প্রতি চরম বৈষম্যমুলক আচরণ করছেন। সকাল-বিকেল পদ ও দায়িত্ব বদল করে রীতিমতো মানষিক নিপীড়ন করছেন। নারী কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িতদের নিয়েছেন বগলদাবায়।

আরও পড়ুন<<>> বাসস এমডিকে দোসর আখ্যা, দুঃখ প্রকাশের জন্য আল্টিমেটাম ডিইউজের

এ চিত্র দেখে এমডি মাহবুব মুর্শেদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয় সাংবাদিকদের সংগঠন ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন। প্রতিষ্ঠানটির গণমাধ্যমকর্মী, শ্রমিক-কর্মচারীদের পাশে দাঁড়াতে ইউনিট সভা আহবান করা হয়। এ সভায় সন্ত্রাসমুলক কর্মকাণ্ড ঘটাতে পারে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন ওই এমডি। তিনি রীতিমতো পুলিশ, মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে ইউনিয়ন নেতাদেরকেও সাবধানমুলক চিঠি দেয়। এতেকরে সাংবাদিক নেতারা অপমানবোধ করেন।

নেতারা নির্ধারিত সময়েই বাসসে শান্তিপূর্ণ সভা করেন। এমডিকে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আল্টিমেটাম দেন। কিন্তু তাতে কর্ণপাত করেননি মাহবুব মুর্শেদ। পরের কর্মসূচিতে আন্দোলনকারীদের ‘জামায়াত’ ট্যাগ দিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোষ্ট দেন। বিষয়টি আরও খারাপ আকার ধারণ করে। এরপর বাসস ঘেরাও কর্মসূচি দেয়া হয়। প্রধান উপদেষ্টা ও তথ্য উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপিও দেয়া হয়েছে সাংবাদিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) তরফ থেকে।

পরিস্থিতি বেগতিক দেখা দিলে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে বিষয়টি সুরাহার উদ্যোগ নেয়। কিন্তু সে সুরাহা আজও হয়নি। এদিকে বিধিভঙ্গ করে নিয়োগ, বদলি, ক্রয়, অফিস সংস্কারের মতো কাজ অব্যাহত রাখেন প্রভাবশালী এমডি মুর্শেদ।

 মাহবুব মুর্শেদের চেয়ারের পা কয়টা?

সাংবাদিক সংগঠনটির দাবি ছিল বাসসের অতীত দুর্নীতি-অনিয়ম চিহ্নিত করা, বৈষম্যবিরোধী অবস্থান নেয়া ফ্যাসিষ্ট দোসরদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া। এ নিয়ে বিবৃতি, সভা-সমাবেশ, স্মারকলিপি সব ধরনের কর্মসিূচি গ্রহণ করেছে ডিইউজে-বিএফইউজে। কিন্তু দায়িত্বপ্রাপ্তদের কেউই কোনো ধরণের ব্যবস্থা নেয়নি। প্রশ্ন উঠেছে, বাসসের এমডি স্বঘোষিত বুদ্ধিজীবী মাহবুব মুর্শেদের খুঁটির জোর কোথায়? প্রধান উপদেষ্টা ও তথ্য উপদেষ্টা থেকে শুরু করে কোনো প্রতিষ্ঠানই কি তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে না? এ নিয়ে বিবৃতির মাধ্যমে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ডিইউজে-বিএফইউজে।

মঙ্গলবার (২৭ মে) বিএফইউজের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওবায়দুর রহমান শাহীন, মহাসচিব কাদের গণি চৌধুরী ও ডিইউজে সভাপতি মো. শহিদুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক খুরশীদ আলম যুক্ত বিবৃতি দিয়েছেন। তারা তারা বলেন, সরকারি এ সংস্থায় জনগণের কষ্টার্জিত ট্যাক্সের শতশত কোটি টাকা লোপাটের বিরুদ্ধে ইউনিয়ন বিগত ফ্যাসিস্ট আমল থেকেই প্রতিবাদ ও তদন্তের দাবি জানিয়ে আসছে। বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থায় (বাসস) বিরাজমান অনিয়ম- দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে কার্যত বিগত ফ্যাসিবাদী আমলের অনিয়ম-দুর্নীতিকে প্রণোদনা দিয়ে যাচ্ছে সরকার। বিশেষ করে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী গত ১০ মাস ইউনিয়ন বিভিন্ন সভা-সমাবেশ, বক্তব্য-বিবৃতির মাধ্যমে সরকারি এ সংস্থায় নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানায়। কিন্তু সংস্থাটির বর্তমান এমডি মাহবুব মোর্শেদ দুর্নীতি ও লুটপাটের ঘটনাকে আড়াল করে ইউনিয়নের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। কারণ, তিনি নিজেও পূর্বের ধারাবাহিকতায় নানা অনিয়মে জড়িয়ে পড়েন। ফলে বিএফইউজে ও ডিইউজে ফ্যাসিস্ট আমলের অনিয়ম ও মাহবুব মোর্শেদের অপসারণের দাবিতে কর্মসূচি ঘোষণা করতে বাধ্য হয়।

আরও পড়ুন<<>> ডিইউজেকে ‘জামায়াত’ ট্যাগ দিলেন বাসস এমডি

বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, কর্মসূচির ধারাবাহিকতায়  সবশেষ প্রধান উপদেষ্টা ও তথ্য উপদেষ্টা বরাবর পূর্বাপর ঘটনার উল্লেখ করে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। এ সময়ের মধ্যে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তাদের অনুরোধ এবং আশ্বাসের প্রেক্ষিতে ডিইউজে কয়েক দফা কর্মসূচি স্থগিত করে। কিন্তু সরকার ইউনিয়নকে দেয়া আশ্বাসকে পাশ কাটিয়ে ফ্যাসিস্ট আমলের ধারাবাহিকতায় বর্তমান এমডির দুর্নীতিকে উৎসাহিত করে যাচ্ছে।

অথচ বাসস-এ বিরাজমান দুর্নীতির বিষয়ে সম্প্রতি দেশের শীর্ষস্থানীয় জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো, যুগান্তর, নয়াদিগন্তসহ অন্যান্য গণমাধ্যমে তথ্যউপাত্তসহ বিশদ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এসব প্রতিবেদনে নবনিযুক্ত বাসস -এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মাহবুব মোর্শেদ ফ্যাসিবাদী আমলের সকল অনিয়ম ও দুর্নীতিকে আত্তীকরণের অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়।

নেতারা বলেন, বিএফইউজে ও ডিইউজে প্রত্যাশা করেছিলো- বিপ্লবী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর ফ্যাসিস্ট আমলের অনিয়ম-দুর্নীতির তদন্ত, জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের মধ্যদিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে। কিন্তু দু:খজনক হলেও সত্য, সরকার রহস্যজনকভাবে নীরব ভূমিকা পালন করছে। উপরন্তু পূর্বের ধারাবাহিকতায় বর্তমান সময়েও চলছে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি।

এসব বিষয়ে ইতোমধ্যে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বাসস এর দুর্নীতি অনুসন্ধানে পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও এমডি মাহবুব মোর্শেদ তাতে বাধা প্রদান করছে এবং তথ্য মন্ত্রণালয় তার প্রতি অন্যায় সমর্থন যোগান দিয়ে যাচ্ছে। ইউনিয়ন নেতৃবৃন্দ স্পষ্টভাবে ঘোষণা করছে, রাষ্ট্রীয় অর্থে পরিচালিত বাসস এর অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে যথাযথ ব্যবস্থা এবং দুর্নীতিকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দানকারি বর্তমান এমডি মাহবুব মোর্শেদকে অপসারণ করতে হবে। অন্যথায় ইউনিয়ন অচিরেই বৃহত্তর কর্মসূচির মাধ্যমে অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ ও এমডি মাহবুব মোর্শেদকে পদত্যাগে বাধ্য করবে।

বাসস এমডি মাহবুব মুর্শেদের মন্তব্য জানতে ০১৭১৪****২১১ নম্বরে কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। ক্ষুদে বার্তা পাঠালেও তিনি সাড়া দেননি।

আপন দেশ/এমএইচ/এবি

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

সম্পর্কিত বিষয়:

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়