Apan Desh | আপন দেশ

বাংলা সাহিত্যের এক ক্ষণজন্মা কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য 

আপন দেশ ডেস্ক

প্রকাশিত: ২২:০৫, ১৬ আগস্ট ২০২৫

আপডেট: ২২:১১, ১৬ আগস্ট ২০২৫

বাংলা সাহিত্যের এক ক্ষণজন্মা কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য 

ছবি: সংগৃহীত

বাংলা সাহিত্যে কিশোর কবি হিসেবে পরিচিত কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য। মাত্র ২১ বছর বয়সে প্রাণপ্রদীপ নিভে যাওয়া সত্ত্বেও বেঁচে আছেন সগৌরবে। জীবনের এ স্বল্প সময়ে লিখে গেছেন সাধারণ মানুষের জীবনসংগ্রাম, যন্ত্রণা ও বিক্ষোভকে পুঁজি করে অসাধারণ সব কবিতা। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত যিনি গণমানুষের মুক্তি ও নতুন সমাজ গড়ার জন্যে লড়াই করেছেন, তিনি অন্য কেউ নন বাংলা সাহিত্যের ‘ক্ষণজন্মা কবি’ সুকান্ত ভট্টাচার্য।

ক্ষণজন্মা এ কবির জন্মদিন ১৫ আগস্ট। ১৯২৬ সালের ১৫ আগস্ট কলকাতায় নানা বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন এ কবি। তাদের পৈতৃক বাড়ি ছিল ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ মহকুমার কোটালীপাড়ায়। সুকান্ত ভট্টাচার্য তার বাবা নিবারণচন্দ্র ভট্টাচার্যের দ্বিতীয় স্ত্রীর দ্বিতীয় সন্তান। তার মায়ের নাম সুনীতি দেবী। মাত্র ২১ বছরের সফরে তিনি জয় করেছেন সাহিত্যপ্রেমী মানুষের হৃদয়। সংক্ষিপ্ত জীবনের সফরেও পৃথিবীতে তার পদচিহ্ন রয়ে গেছে—থাকবে যতদিন বাংলা সাহিত্য বেঁচে থাকে।

কিশোর বয়সেই নিজের বিদ্যালয় কমলা বিদ্যামন্দির থেকে প্রকাশিত ‘সঞ্চয়’ সাময়িকীতে তারর ছোটগল্প প্রকাশিত হয়। শিখা পত্রিকায় প্রকাশিত হয় স্বামী বিবেকানন্দ জীবনী নামে গদ্য। কমলা বিদ্যামন্দিরের পাঠ চুকিয়ে ভর্তি হন বেলেঘাটা উচ্চ বিদ্যালয়ে। তখন থেকেই সুকান্তর কবিতা ছাপা হতো বিভিন্ন পত্রিকা, সাহিত্য সাময়িকীতে। লেখালেখির সূত্রে কবি অরুণাচল বসুর সঙ্গে পরিচয় হয় তার। দুজনে মিলে সম্পাদনা করেন হাতে লেখা পত্রিকা ‘সপ্তমিকা’।

সুকান্ত ভট্টচার্যের পরিবার ছিল শিক্ষিত ও সাহিত্যানুরাগী। সেজন্য শৈশব-কৈশোরে তিনি পরিচিত হয়েছেন বিখ্যাত সব কবি, সাহিত্যিকদের লেখার সঙ্গে। কবির সাহিত্যের প্রতি ঝোঁক তৈরিতে অবদান রাখেন তার চাচাতো বোন রাণী ভট্টাচার্য। শিশুকাল থেকেই সুকান্তের সহচর রাণীদি শোনাতেন বিখ্যাত সব কবিদের ছড়া, কবিতা কিংবা লেখকদের গল্প। অকস্মাৎ রাণীদি কবিকে ছেড়ে পাড়ি জমান অজানার উদ্দেশ্যে। সুনীতি দেবীকেও হারান অল্প বয়সেই। মা এবং দিদিকে হারিয়ে নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েন এ কবি। জীবনের এক পর্যায়ে নেমে আসে নিঃসঙ্গতা, নির্জনতা, চরম একাকিত্ব কিংবা দরিদ্রতা। এ মর্মন্তুদ জীবনেও ইস্তফা দেননি সাহিত্যচর্চা। তিনি লিখেছেন—
কবিতা তোমায় দিলাম আজকে ছুটি
ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী-গদ্যময়:
পূর্ণিমা-চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি।

আরওপড়ুন<<>>বারিধারা পার্কে ‘পল্লীকবি জসীমউদ্দীন পাঠাগার’ উদ্বোধন

সুকান্ত শৈশব পেরিয়ে কৈশোর কিংবা যৌবনের দিকে যাচ্ছিলেন; পৃথিবীতে তখন চলছিল দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের তাণ্ডব পৈশাচিক নৃত্য, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, ফ্যাসিবাদের আগ্রাসন, সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন। রাজনীতি সচেতন কবি সুকান্ত জড়িয়ে পড়েন সমাজতন্ত্রের প্রতি। শোষণহীন সমাজ বিনির্মাণে তার ক্ষুরধার কলম চলতে থাকে। লেখা প্রকাশিত হয় বিভিন্ন পত্রিকা, সাময়িকীতে। ১৯৪৪ সালে ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দিলে পড়াশোনায় ভাটা পড়ে। ফলাফল পরের বছর ম্যাট্রিক পরীক্ষায় ফেল। ওই সময়ে বিভিন্ন ছাত্র আন্দোলন ও বামপন্থী রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করায় আনুষ্ঠানিক শিক্ষার সমাপ্তি ঘটে। শিক্ষাজীবনে সমাপ্তি ঘটলেও বারুদের ঝাণ্ডা উড়তেই থাকে তার কলমে। তিনি লেখেন—
আমি একটা ছোট্ট দেশলাইয়ের কাঠি
এত নগণ্য, হয়তো চোখেও পড়ি নাঃ
তবু জেনো
মুখে আমার উসখুস করছে বারুদ—
বুকে আমার জ্বলে উঠবার দুরন্ত উচ্ছ্বাস;
আমি একটা দেশলাইয়ের কাঠি।

ক্ষণজন্মা কবি চাইতেন পৃথিবীতে নেমে আসবে সাম্য, সুন্দর—জয় হবে মানবতার। পৃথিবীর কোনো জঞ্জাল একটি মানব শিশুকেও স্পর্শ করবে না। তিনি পুত-পবিত্র করে রেখে যেতে চেয়েছেন সুন্দর এ ধরণী। জীর্ণ পৃথিবীতে ব্যর্থ, মৃত আর ধ্বংসস্তূপ রেখে যেতে চাননি এ কবি। প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ, প্রাণপণে সরাবেন পৃথিবীর সব জঞ্জাল। তাই তো সুকান্ত ছাড়পত্র কবিতায় লিখেছিলেন—
এসেছে নতুন শিশু, তাকে ছেড়ে দিতে হবে স্থান;
জীর্ণ পৃথিবীতে ব্যর্থ, মৃত আর ধ্বংসস্তূপ-পিঠে
চলে যেতে হবে আমাদের।
চলে যাব—তবু আজ যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ
প্রাণপণে পৃথিবীর সরাব জঞ্জাল,
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য ক’রে যাব আমি
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।

সুকান্ত ভট্টাচার্যের রচনাবলীর মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হলো- ছাড়পত্র (১৯৪৭), পূর্বাভাস (১৯৫০), মিঠেকড়া (১৯৫১), অভিযান (১৯৫৩), ঘুম নেই (১৯৫৪), হরতাল (১৯৬২), গীতিগুচ্ছ (১৯৬৫) প্রভৃতি। ক্ষণজন্মা এ কবি ১৯৪৭ সালের ১৩ মে কলকাতার যাদবপুর, ১১৯ লাউডন স্ট্রিটের রেড এন্ড কিওর হোমে যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত হয়ে মাত্র ২১ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।

আপন দেশ/এমএইচ
 

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়