Apan Desh | আপন দেশ

প্রত্ননিদর্শনের রাজ্য শতবর্ষী বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর

মো. রাফাসান আলম, রাবি প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৪:১২, ১৮ মে ২০২৫

প্রত্ননিদর্শনের রাজ্য শতবর্ষী বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর

ছবি : আপন দেশ

দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রত্নসম্পদসমৃদ্ধ সংগ্রহশালা রাজশাহীর বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর। ১৯১০ সালে প্রতিষ্ঠিত এ শতবর্ষী জাদুঘরটি দেশের প্রথম জাদুঘর হিসেবে ইতিহাসে স্থান করে নিয়েছে। অন্যান্য জাদুঘরের মতো এটি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীনে না থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সরাসরি তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হচ্ছে।

দীর্ঘদিন অব্যবস্থাপনা ও অবহেলার শিকার হলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিদেশি গবেষকদের আগ্রহ, রাষ্ট্রদূতদের পরিদর্শন, আন্তর্জাতিক চুক্তি এবং আধুনিকায়নের বিভিন্ন উদ্যোগের ফলে নতুন প্রাণ ফিরে পেয়েছে বরেন্দ্র জাদুঘর। যুক্ত হয়েছে আধুনিক গ্যালারি, থ্রিডি প্রযুক্তি, কয়েন গ্যালারি ও গবেষকদের জন্য ডরমিটরি নির্মাণের পরিকল্পনা।

জাদুঘর কর্তৃপক্ষের ডকুমেন্টারি স্ক্রিপ্টে উল্লেখ করা হয়েছে, বরেন্দ্র জাদুঘরের সংগ্রহে রয়েছে এমন কিছু দুর্লভ নিদর্শন, যা কেবল বাংলাদেশের মধ্যেই নয়, সারা বিশ্বেও বিরল। বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য পাল-সেন যুগের দুই সহস্রাধিক ভাস্কর্য, সচিত্র অষ্টসাহস্রিকা প্রজ্ঞাপারমিতা পুঁথি, অর্ধনারীশ্বর শিব, লাইফ-সাইজ গঙ্গা মূর্তি ও ধ্রুপদি শিল্পের নানা নিদর্শন।

বর্তমানে জাদুঘরটির সংগ্রহে রয়েছে প্রায় ১৭ হাজার প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন, যার মধ্যে প্রদর্শিত হচ্ছে মাত্র ১১০০ থেকে ১২০০ টি। স্থানাভাবে বাকিগুলো রাখা হয়েছে তালাবদ্ধ গুদামে। ফলে দর্শনার্থীরা এসব ঐতিহাসিক সম্পদ দেখার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

সংরক্ষণে ঘাটতি রয়েছে প্রাচীন পাণ্ডুলিপির ক্ষেত্রেও। সংগ্রহে থাকা প্রায় ছয় হাজার বাংলা ও সংস্কৃত ভাষার হাতে লেখা পাণ্ডুলিপির বেশ কিছু ইতোমধ্যেই নষ্ট হয়ে গেছে। এর মধ্যে রয়েছে ১২৭৩ খ্রিস্টাব্দের তালপাতায় লিখিত ও চিত্রাঙ্কিত দুর্লভ পাণ্ডুলিপিও। এসব মূল্যবান দলিলের কোনো ডিজিটাল কপিও সংরক্ষিত নেই।

জাদুঘরের নবনিযুক্ত পরিচালক ও ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ড. কাজী মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আগের তুলনায় পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। সম্প্রতি ব্রিটিশ কাউন্সিলের সহায়তায় চার মাসব্যাপী প্রশিক্ষণ হয়েছে। ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়েছে, যা গবেষণাকে আরও গতিশীল করবে।

তিনি জানান, জাদুঘরটি আলোকসজ্জা, নতুন গ্যালারি এবং থ্রিডি প্রযুক্তিতে সাজানো হচ্ছে। পাশাপাশি কয়েন গ্যালারি তৈরির কাজও শিগগির শুরু হবে। তবে জনবল সংকট, গবেষকদের আবাসনের অভাব ও পর্যাপ্ত প্রদর্শনীর স্থান না থাকায় কিছু প্রতিবন্ধকতা রয়ে গেছে।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা বলতে গিয়ে তিনি জানান, পাশের দুটি পুরনো ভবন ভেঙে নতুন গ্যালারি ও গবেষকদের জন্য তিনতলা ডরমিটরি নির্মাণের পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। তবে এসব বাস্তবায়নে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সহযোগিতা অত্যন্ত প্রয়োজন।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব বলেন, বর্তমানে জাদুঘরে ব্যাপক পরিবর্তন পরিলক্ষিত হচ্ছে। প্রত্ননিদর্শন সংগ্রহ ও সংরক্ষণের কার্যক্রমে নতুন উদ্যম দেখা যাচ্ছে। গবেষকদের জন্য আবাসনের ব্যবস্থাসহ জাদুঘরের সম্প্রসারিত অংশ নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, বিদেশি গবেষক ও রাষ্ট্রদূতদের আগমন জাদুঘরের গুরুত্ব আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে তুলে ধরছে। বলা যায়, বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর তার গৌরবময় ঐতিহ্যকে ধারণ করে নতুন করে প্রাণ ফিরে পেয়েছে।

জাদুঘরের সময়সূচি ও প্রবেশ মূল্য: সাপ্তাহিক ছুটি রোববার বাদে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত জাদুঘর খোলা থাকে। দর্শনার্থীদের জন্য প্রবেশমূল্য ২০ টাকা, রাবি শিক্ষার্থীদের জন্য ১০ টাকা। রাবি শিক্ষার্থীরা পরিচয়পত্র দেখিয়ে গবেষণা ও লাইব্রেরি ব্যবহার করতে পারেন বিনামূল্যে।

আপন দেশ/জেডআই

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

সম্পর্কিত বিষয়:

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়