Apan Desh | আপন দেশ

‘ভুল স্বীকার’ মুমিনের মহৎ গুণ

আপন দেশ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১১:৩২, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

‘ভুল স্বীকার’ মুমিনের মহৎ গুণ

মসজিদ

মানবজীবনে ভুল এক অনিবার্য বাস্তবতা। জ্ঞাতে-অজ্ঞাতে, ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় আমরা হরহামেশাই ভুল করে থাকি। কিন্তু সে ভুলকে আঁকড়ে ধরে অহংকার ও আত্মম্ভরিতার পথে চলা যেমন ধ্বংসের নামান্তর, তেমনি নিজের ভুল অকপটে স্বীকার করে অনুতপ্ত হওয়া এক মহৎ গুণ। এটি মহান আল্লাহর নিকট অত্যন্ত পসন্দনীয় একটি আমল। 

যে ব্যক্তি নিজের ভুল স্বীকার করার মতো সৎ সাহস রাখে, সে কেবল নৈতিকভাবেই শক্তিশালী নয়। বরং সে আল্লাহর ক্ষমা ও করুণা লাভের পথেও এক ধাপ এগিয়ে যায়। আর ভুল স্বীকার করা মানুষের দুর্বলতা নয়। কারণ সৃষ্টিগতভাবেই ভুল করার প্রবণতা মানুষের মধ্যে রয়েছে। তাই ভুল হ’লে স্বীকার করে নেয়াই যৌক্তিক এবং উত্তম বান্দার বৈশিষ্ট্য।

ভুল স্বীকারের গুরুত্ব ও ফজিলত
ভুল স্বীকার করার জন্য সৎসাহস প্রয়োজন। এটি এক ধরনের বিনয়, যা আল্লাহর কাছে প্রিয়। ভুল স্বীকারের মাধ্যমে তাওবার দরজা খুলে যায়, যার ফলে আল্লাহর ক্ষমা লাভ করা সহজ হয়। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, প্রত্যেক মানুষই ভুল করে, আর ভুলকারীদের মধ্যে তারাই সর্বোত্তম যারা ভুলের পর অনুতপ্ত হয় (এবং তাওবা করে)। (সুনানে তিরমিজি: ২৪৯৯)

আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে বলেন- কিছু লোক আছে, যারা তাদের অপরাধ স্বীকার করেছে। তারা তাদের কর্মে ভালো ও মন্দ মিশ্রিত করেছে। অবশ্যই আল্লাহ তাদের তাওবা কবুল করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ অতিক্ষমাশীল ও দয়াবান। (সুরা তাওবা: ১০২) এ আয়াত থেকে বোঝা যায়, আল্লাহ এমন বান্দাদের ভালোবাসেন, যারা নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে অনুতপ্ত হয়।

নবী-রাসুল ও সাহাবিদের জীবন থেকে শিক্ষা
নবী-রাসুল ও সাহাবিদের জীবনেও ভুল স্বীকারের অসাধারণ উদাহরণ রয়েছে। আদম (আ.) ও হাওয়া (আ.): নিষিদ্ধ ফল খাওয়ার পর তারা অনুতপ্ত হয়ে দোয়া করেছিলেন, হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা নিজেদের প্রতি জুলুম করেছি। তুমি যদি আমাদের ক্ষমা না করো এবং দয়া না করো, তবে আমরা ধ্বংসপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত হব। (সুরা আরাফ: ২৩)। এ দোয়ার ফলে আল্লাহ তাদের ক্ষমা করেন।

ইউনুস (আ.): মাছের পেটে বন্দি হয়ে তিনি বলেছিলেন, তুমি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই। তুমি পবিত্র। নিশ্চয়ই আমি সীমালঙ্ঘনকারী। (সুরা আম্বিয়া: ৮৭)। এই স্বীকারোক্তি তাকে কঠিন বিপদ থেকে রক্ষা করেছিল।

হজরত আবু বকর (রা.) ও ওমর (রা.) একবার বিতর্কের সময় আবু বকর (রা.) ওমর (রা.)-কে কষ্ট দেন। পরে তিনি অনুতপ্ত হয়ে ক্ষমা চান। রাসুলুল্লাহ (স.) এ বিষয়ে বলেন, তোমাদের এ সঙ্গী আবু বকর আগে কল্যাণ লাভ করেছে। (সহিহ বুখারি: ৪৬৪০)

আরও পড়ুন<<>>অমুসলিমদের স্পর্শে কি ওযু ভেঙে যায়?

এর বিপরীতে, ইবলিস তার ভুল স্বীকার না করে অহংকারবশত অজুহাত দেখায়, যার ফলে সে চিরদিনের জন্য অভিশপ্ত হয়।

ভুল স্বীকার না করার পরিণতি
ভুল স্বীকার না করলে তা জেদের কারণে বাড়তে থাকে। অহংকার বৃদ্ধি পায়, যা আত্মিক পতন ঘটায়। এর ফলে নৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয়। ভুলকে স্বীকার করে সংশোধন না করলে তা ব্যক্তিকে একগুঁয়ে করে তোলে এবং অন্যের কাছে তার সম্মান কমে যায়।

মোটকথা, ভুল স্বীকার করা দুর্বলতা নয়, বরং এটি নৈতিক সাহস এবং ইমানি শক্তির পরিচয়। যে ব্যক্তি নিজের ভুল স্বীকার করে তা সংশোধনের চেষ্টা করে, সে দুনিয়া ও আখেরাতে উভয় জগতেই সম্মানিত হয়। ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে নিজেকে উন্নত করার এ পথই একজন মুমিনের জন্য সর্বোত্তম।

সামাজিক ও পেশাগত জীবনে গুরুত্ব  
পেশাগত জীবনে ভুল স্বীকারের গুরুত্ব অপরিসীম। কর্মক্ষেত্রে একটি ছোট ভুলও যদি সময়মতো স্বীকার করা না হয়, তবে তা পরবর্তীতে বড় ধরনের ক্ষতি বা বিপর্যয়ের কারণ হ’তে পারে। যে কর্মী বা নেতা নিজের ভুল স্বীকার করে তা সংশোধনের চেষ্টা করেন, তিনি একটি দায়বদ্ধ ও স্বচ্ছ কর্মপরিবেশ তৈরিতে সহায়তা করেন। একজন দায়িত্বশীল যখন নিজের ভুল স্বীকার করেন, তখন তার কর্মীদের মধ্যে তার প্রতি বিশ্বাস ও সম্মান আরো বৃদ্ধি পায়। এর মাধ্যমে টীমে বা সংগঠনে একটি ইতিবাচক সংস্কৃতি গড়ে ওঠে, যেখানে প্রত্যেকেই ভুল থেকে শিখতে উৎসাহিত হয় এবং একে অপরকে দোষারোপ করার পরিবর্তে সমাধানের দিকে মনোনিবেশ করে।

পারিবারিক জীবনে ভুল স্বীকারের গুরুত্ব  
পারিবারিক জীবনেও এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ গুণ, যা পরিবারের ভিত্তি মযবূত করে এবং সদস্যদের মধ্যে সম্পর্কের গভীরতা, বিশ্বাস ও সম্মান বৃদ্ধি পায়। যখন একজন সদস্য তার ভুল মেনে নেয়, তখন তা তার সততা এবং বিনয়ের পরিচয় বহন করে। এর ফলে অহংকার ও যিদের মতো ক্ষতিকর বিষয়গুলো দূর হয়, যা প্রায়শই পারিবারিক অশান্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

বিশেষত স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক ভুল স্বীকার আরো গুরুত্বপূর্ণ, যা দাম্পত্য জীবনকে আরও মযবূত ও মধুর করে তোলে। যখন স্বামী বা স্ত্রী নিজের ভুল স্বীকার করে নেন, তখন তা কেবল একটি সাধারণ ক্ষমা চাওয়া হয় না, বরং এটি জীবনসঙ্গীর প্রতি সম্মান ও ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটায়। পারস্পরিক ভুল স্বীকারের মধ্য দিয়ে একে অপরকে আরও ভালোভাবে বুঝতে শেখে এবং তাদের মধ্যেকার মানসিক বন্ধন দৃঢ় হয়। এটি কেবল বর্তমানের সমস্যাই সমাধান করে না, বরং ভবিষ্যতে বড় ধরনের সংঘাত এড়াতেও সাহায্য করে।

আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে ভুল স্বীকার করে আন্তরিকভাবে তাওবা করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

আপন দেশ/জেডআই

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

সম্পর্কিত বিষয়:

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়