Apan Desh | আপন দেশ

অমুসলিমদের স্পর্শে কি ওযু ভেঙে যায়?

জাহেদুল ইসলাম আল রাইয়ান

প্রকাশিত: ১৩:০৩, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫

অমুসলিমদের স্পর্শে কি ওযু ভেঙে যায়?

ফাইল ছবি

আমাদের সমাজে একটি প্রচলিত ভুল ধারণা হলো, অমুসলিমদের সঙ্গে হাত মেলানো বা তাদের স্পর্শে মুসলমানদের ওজু ভেঙে যায়। তবে শরীয়তের আলোকে এ ধারণার কোনো ভিত্তি নেই।

কুরআন ও সহিহ হাদিসে ওজু ভাঙার যেসব কারণ উল্লেখ রয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে প্রস্রাব-পায়খানা, গভীর নিদ্রা, গ্যাস নির্গমন, রক্ত বা পুঁজ বের হওয়া ইত্যাদি। কিন্তু কোথাও অমুসলিমকে স্পর্শ করা বা তাদের সঙ্গে হাত মেলানোকে ওজু ভাঙার কারণ বলা হয়নি (সহিহ বুখারি: ১৩৫, সহিহ মুসলিম: ৩৬২)।

কুরআনের সুরা তাওবার একটি আয়াতে বলা হয়েছে: “হে মুমিনগণ! মুশরিকরা তো নাপাক (নাজিস)...” (তাওবা ৯:২৮)। 

এখানে অনেকের ভুল ধারণা তৈরি হয়েছে যে বিধর্মীরা শারীরিকভাবে নাপাক। অথচ ইবনে কাসির, তাবারী, কুরতুবী প্রমুখ মুফাসসিরগণ ব্যাখ্যা করেছেন—এখানে নাপাক বলতে বিশ্বাসগত বা আকিদাগত অপবিত্রতা বোঝানো হয়েছে, শারীরিক নয়। তাই তাদের শরীর, পোশাক বা ছোঁয়া কোনোভাবেই মুসলমানকে অপবিত্র করে না।

রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জীবনে এর বাস্তব দৃষ্টান্ত অসংখ্য। তিনি ইহুদিদের সঙ্গে লেনদেন করেছেন, এমনকি মৃত্যুর সময় তার বর্মটি একটি ইহুদির কাছে বন্ধক রাখা ছিল (সহিহ বুখারি: ২৯১৬)। 

তিনি অসুস্থ এক ইহুদিকে দেখতে গিয়েছিলেন এবং তাকে ইসলাম গ্রহণের আহবান জানিয়েছিলেন (সহিহ বুখারি: ১৩৫৬)। 

তিনি ইহুদি প্রতিবেশীর আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছিলেন (সহিহ মুসলিম: ২০৫৫)। যদি বিধর্মীদের স্পর্শে ওজু ভেঙে যেত, তবে এ সবকিছু সম্ভব হতো না।

খলিফা উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) জেরুজালেম বিজয়ের সময় খ্রিস্টানদের সঙ্গে চুক্তি করেছিলেন, যেখানে তাদের উপাসনালয় ও ধর্মীয় স্বাধীনতা রক্ষার নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছিল। এটি ইসলামের সহাবস্থান ও সহনশীলতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। 

আরও পড়ুন<<>>জুমার দিনের গুরুত্বপূর্ণ ১৭ আমল

ইমাম আবু হানিফা (রহ.)-ও অমুসলিমদের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্যে অংশ নিতেন। কোনো ফকিহ কখনো বলেননি যে তাদের ছোঁয়ায় ওজু ভেঙে যায়।

কুরআন স্পষ্টভাবে বলে: আল্লাহ তোমাদেরকে সেই সব লোকের সঙ্গে সদাচরণ ও ন্যায়বিচার করতে নিষেধ করেন না, যারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে না এবং তোমাদের দেশ থেকে বের করে দেয়নি। নিশ্চয়ই আল্লাহ ন্যায়পরায়ণদের ভালোবাসেন। (সূরা মুমতাহিনা ৬০:৮)। 

অর্থাৎ ধর্মের প্রশ্নে আপস নয়, কিন্তু মানবিক সম্পর্ক ও সামাজিক সহাবস্থান বৈধ এবং প্রশংসনীয়।

সমাজে যে ভ্রান্ত ধারণা ছড়ানো হয়েছে—অমুসলিমরা স্পর্শ করলে ওজু ভেঙে যায়—তা ইসলামের মূল শিক্ষার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। ইসলাম কখনো মানুষকে বিভক্ত করতে চায় না, বরং সত্য বিশ্বাসের সীমারেখা বজায় রেখে পারস্পরিক সহাবস্থানের পথ দেখায়। 

আজকের বিশ্বে মুসলমানরা অমুসলিমদের সঙ্গে শিক্ষা, চিকিৎসা, ব্যবসা ও কর্মক্ষেত্রে পাশাপাশি কাজ করছে। যদি তাদের স্পর্শেই ওজু ভেঙে যেত, তবে তা বাস্তব জীবনকে প্রায় অসম্ভব করে তুলত।

অতএব, শরীয়তের নির্ভুল বক্তব্য হলো—বিধর্মীর স্পর্শে ওজু ভাঙে না। ইসলাম মানুষের সঙ্গে সুসম্পর্ক, ন্যায়পরায়ণতা ও মানবিকতাকে অগ্রাধিকার দিয়েছে। তাই আমাদের উচিত কুসংস্কার ও ভুল ধারণা দূর করে কুরআন-সুন্নাহর আলোকে ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা অনুধাবন করা এবং সহনশীল মানবিক সমাজ গড়ে তোলা।

লেখক: শিক্ষার্থী, আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়, মিশর

আপন দেশ/জেডআই

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

সম্পর্কিত বিষয়:

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়