Apan Desh | আপন দেশ

শিবিরের নতুন নেতৃত্ব নিয়ে কৌতূহল

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৭:৪৪, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫

শিবিরের নতুন নেতৃত্ব নিয়ে কৌতূহল

সংগৃহীত ছবি

বিদায় নিতে যাচ্ছেন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের বর্তমান কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম। ছাত্রত্ব শেষ হওয়ায় নতুন বছরে আর সংগঠনের দায়িত্বে থাকতে চান না তিনি। ফলে কে হচ্ছেন ২০২৫ সেশনের নতুন কাণ্ডারি, তা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গন ও সংগঠনের ভেতরে-বাইরে শুরু হয়েছে জোর গুঞ্জন।

শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে শিবিরের সম্মেলন। দেশের পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে এবারের সম্মেলন থেকে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনকে তাৎপর্যপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

দলীয় সূত্রমতে, ছাত্রত্ব শেষ হওয়ায় সংগঠনের বর্তমান কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম আর দলে থাকতে চান না। সে হিসেবে নতুন বছর থেকেই দায়িত্ব থেকে বিদায় নিতে চান তিনি। 

গঠনতান্ত্রিক নিয়ম অনুযায়ী, সারা দেশ থেকে আসা কয়েক হাজার সদস্যের সরাসরি গোপন ভোটের মাধ্যমে নতুন সভাপতি নির্বাচন করা হবে। নির্বাচিত সভাপতি একজনকে সেক্রেটারি মনোনীত করবেন। এবারের সম্মেলনে সভাপতি হওয়ার দৌঁড়ে বেশ কয়েকজন নেতার নাম জোরালোভাবে আলোচিত হচ্ছে।

শীর্ষ পদটির লড়াইয়ে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে আছেন বর্তমান সেক্রেটারি জেনারেল নুরুল ইসলাম সাদ্দাম। আলোচনায় রয়েছেন বর্তমান কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক ও ঢাবি শাখার সাবেক সভাপতি সিবগাতুল্লাহ, কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক আজিজুর রহমান আজাদ ও কেন্দ্রীয় প্রকাশনা সম্পাদক, ডাকসুর ভিপি সাদিক কায়েমও। 

যদিও দলটির ইতিহাস ঘেঁটে দেখা গেছে, শিবিরের রাজনীতিতে সেক্রেটারিই সাধারণত কেন্দ্রীয় সভাপতি হয়ে থাকেন। এমন না হওয়ার নজির খুব একটা দেখা যায়নি সংগঠনটিতে। সে হিসেবে নুরুল ইসলাম সাদ্দাম দলটির নতুন কাণ্ডারি হওয়ার সম্ভবনা প্রবল। এক্ষেত্রে আলোচনায় থাকা সিবগাতুল্লাহ, আজিজুর রহমান আজাদ ও সাদিক কায়েমের সেক্রেটারি হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।

সংগঠনটির নেতারা বলছেন, আলোচনায় থাকা নেতাদের মধ্যেই সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। একই সঙ্গে যিনি সভাপতি নির্বাচিত হবেন, ব্যতিক্রম না হলে তিনি আলোচনায় থাকা বাকি নেতাদের মধ্য থেকেই একজনকে সেক্রেটারি জেনারেল মনোনীত করবেন। তাদের মতে, ২০২৫ সালের এ সম্মেলন ছাত্রশিবিরের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। সামনে জাতীয় নির্বাচন থাকায় ভোটারদের একটি বড় অংশ তরুণ প্রজন্মকে আকৃষ্ট করতে মেধাবী ও কৌশলী নেতৃত্বের দরকার। পাশাপাশি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ছাত্র রাজনীতির নতুন ধারায় নিজেদের অবস্থান সুসংহত করাও নতুন কমিটির প্রধান লক্ষ্য হবে।

গত ৩৩ সভাপতির মধ্যে ৩০ জনই একই পথ অনুসরণ

১৯৭৭ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ থেকে যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির। প্রতিষ্ঠাকাল থেকে প্রায় ৫০ বছরে এ পর্যন্ত ছাত্রসংগঠনটির প্রায় একই সংখ্যক কমিটি গঠিত হয়েছে। শিবিরের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সর্বমোট ৩৩জন এ সংগঠনের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। কেউ কেউ একাধিক মেয়াদে নির্বাচিত হয়েছেন। সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবেও কেউ কেউ একাধিকবার দায়িত্ব পালন করেছেন। তবে এ ৩৩জন সভাপতির মধ্যে ৩০ জন তার পূর্ববর্তী সেশনে সেক্রেটারি জেনারেল ছিলেন।

সর্বশেষ গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সদস্য সম্মেলনে ভোটের ভিত্তিতে ২০২৫ সেশনের সংগঠনটির সভাপতি নির্বাচিত হন জাহিদুল ইসলাম, যিনি এর আগে ২০২৪ সেশনে সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০২৫ সালের জন্য সেক্রেটারি জেনারেল নির্বাচিত হন আগের কমিটির দফতর সম্পাদক নুরুল ইসলাম সাদ্দাম।

ছাত্রশিবিরের সংবিধানের ১৩ ও ১৪ নম্বর ধারায় সভাপতি নির্বাচনের প্রক্রিয়া বর্ণিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, এ সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি সংগঠনের সদস্যদের প্রত্যক্ষ ভোটে এক বছরের জন্য নির্বাচিত হবেন। যদি কোনো কারণবশত কেন্দ্রীয় সভাপতির পদ স্থায়ীভাবে শূন্য হয়, তাহলে কার্যকরী পরিষদ পরিষদের মধ্যে থেকে একজনকে সাময়িকভাবে কেন্দ্রীয় সভাপতি নির্বাচিত করে খুব শিগগির সম্ভব সদস্যদের ভোটে সেশনের অবশিষ্ট সময়ের জন্য কেন্দ্রীয় সভাপতি নির্বাচনের ব্যবস্থা করবেন। যদি কেন্দ্রীয় সভাপতি সাময়িকভাবে ছুটি গ্রহণে বাধ্য হন, তাহলে তিনি কার্যকরী পরিষদের সঙ্গে পরামর্শ করে পরিষদের মধ্যে থেকে তিন মাসের জন্য অস্থায়ী সভাপতি নিযুক্ত করতে পারবেন।

মীর কাশেম আলী ছিলেন কেন্দ্রীয় ছাত্রশিবিরের প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি। প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসেবে তার সেক্রেটারি জেনারেলের দায়িত্ব পালনের সুযোগ ছিল না। সেক্রেটারি জেনারেল না হয়ে সরাসরি সভাপতির দায়িত্ব পালন করা বাকি দুইজন হলেন মুহম্মদ কামারুজ্জামান ও মুহাম্মদ শাহজাহান।

সর্বশেষ পাঁচ সভাপতি সিরাজুল ইসলাম, সালাহউদ্দিন আইউবী, হাফেজ রাশেদুল ইসলাম, রাজিবুর রহমান পলাশ, মঞ্জুরুল ইসলাম ও জাহিদুল ইসলামও আগে সেক্রেটারি জেনারেলের দায়িত্ব পালন করেছেন।

ছাত্রশিবিবের কমিটির মেয়াদকাল বিশ্লেষণ করে পাওয়া যায়, ৪৯ কমিটির কোনোটি এক বছরের বেশি মেয়াদে ছিল না। ডিসেম্বরের শেষে অথবা জানুয়ারির শুরুতে কেন্দ্রীয় সম্মেলনের মাধ্যমে তারা নেতৃত্ব নির্বাচনের কার্যক্রম শেষ করেছেন।

এর আগে কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক আজিজুর রহমান আজাদ গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, আগামী ২৬ ডিসেম্বর (শুক্রবার) রাজধানীর বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সদস্য সম্মেলন ২০২৫। দিনব্যাপী আয়োজিত এ সম্মেলনে সারা দেশের সকল সদস্য অংশগ্রহণ করবেন। সকাল ৮টায় অর্থসহ পবিত্র কুরআন তেলওয়াতের মধ্য দিয়ে সম্মেলনের প্রথম অধিবেশন শুরু হবে। সম্মেলনের উদ্বোধন ঘোষণা ও প্রারম্ভিক বক্তব্যের পর দেশ-বিদেশের গুরুত্বপূর্ণ ও বরেণ্য মেহমানবৃন্দ, বিশিষ্ট ইসলামিক স্কলারসহ অতিথিদের বক্তব্যের মধ্য দিয়ে বেলা ১টায় প্রথম অধিবেশন সমাপ্ত হবে।

স্বল্প বিরতির পর দুপুর ২টা থেকে সম্মেলনের সমাপনী অধিবেশন শুরু হবে। সমাপনী অধিবেশনে কেন্দ্রীয় সভাপতি নির্বাচন ও সেক্রেটারি জেনারেল মনোনয়ন, সমাপনী বক্তব্য ও দোয়া-মুনাজাতের মাধ্যমে বার্ষিক সদস্য সম্মেলন–২০২৫ এর কার্যক্রম সমাপ্ত হবে।

প্রসঙ্গত, ১৯৭৭ সালে ইসলামী ছাত্রশিবির প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রতিবছর ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে কেন্দ্রীয় সদস্য সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এখান থেকে সভাপতি নির্বাচন ও সেক্রেটারি জেনালের মনোনয়নের পর সারাদেশেও একই প্রক্রিয়ায় মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচন করা হয়। তবে শিবিরের অনেক সভাপতি পরপর দুইবার নির্বাচিত হওয়ার নজির রয়েছে।

আপন দেশ/এমবি

মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

Advertisement

জনপ্রিয়