Apan Desh | আপন দেশ

ডাকসু ভোট, জাতীয় নির্বাচনের রিহার্সাল

বিশেষ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৪:০৭, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫

আপডেট: ১৪:১৯, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ডাকসু ভোট, জাতীয় নির্বাচনের রিহার্সাল

ছবি: আপন দেশ

আগামী ৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন। দীর্ঘ বিরতির পর আয়োজিত এ ভোটকে ঘিরে শুধু ক্যাম্পাস নয়, জাতীয় রাজনৈতিক অঙ্গনেও তুমুল আলোচনা চলছে। অনেকে মনে করছেন, এটি কেবল ক্যাম্পাসভিত্তিক নির্বাচন নয়; বরং জাতীয় সংসদ নির্বাচনের একটি রিহার্সাল, যেখানে তরুণ ভোটারদের মানসিকতা ও রাজনৈতিক অভিমুখ স্পষ্ট হয়ে উঠবে।

গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দলটির কার্যক্রম নিষিদ্ধ হয়। সঙ্গে সঙ্গে নিষিদ্ধ ঘোষিত হয় ছাত্রলীগও। ফলে এবারের ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রলীগের কোনো প্রার্থী নেই। তবে তাদের সমর্থকরা মাঠে সক্রিয় রয়েছেন। বিশেষ করে ছাত্রশিবিরকে ঠেকাতে তারা অনলাইনে এবং সরাসরি প্রচারে ছাত্রদলকে ‘সেকেন্ড বেস্ট’ হিসেবে ভোট দেয়ার আহবান জানাচ্ছেন। এ অবস্থান বিএনপির জন্য এক নতুন সম্ভাবনার ইঙ্গিত তৈরি করেছে। বিশ্লেষকদের মতে, নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের সমর্থকরা যদি সত্যিই ছাত্রদলের দিকে ঝুঁকে পড়েন, তবে জাতীয় রাজনীতির সমীকরণে বড় পরিবর্তন ঘটতে পারে। সংসদ নির্বাচনে বিএনপি সুবিধাজনক অবস্থানে যেতে পারে।

আরও পড়ুন<<>> এবার জাকসু নির্বাচন স্থগিত চেয়ে হাইকোর্টে রিট

অন্যদিকে, জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ছাত্রশিবিরও এবারের নির্বাচনে ঐক্যবদ্ধ জোট গড়ে অংশ নিচ্ছে। তাদের লক্ষ্য ডাকসুতে শক্ত অবস্থান তৈরি করা। যদি তারা তা করতে সক্ষম হয়, তবে জাতীয় রাজনীতিতে জামায়াতের দরকষাকষির ক্ষমতা বাড়বে। ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলো নতুন প্রেরণা পাবে। সংসদ নির্বাচনে জামায়াতের ভোটব্যাংক আরও মজবুত হতে পারে। একইসঙ্গে বামঘরানার বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ এবং প্রতিরোধ পর্ষদের মতো প্যানেলগুলোও সক্রিয় রয়েছে। ফলে এবারের ডাকসু নির্বাচন এক ধরনের ত্রিমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতার চিত্র ফুটিয়ে তুলছে।

ডাকসুর ২৮টি পদের বিপরীতে এবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৪৬২ জন প্রার্থী। এর মধ্যে ভিপি পদে ৪৮, জিএসে ১৯ এবং এজিএসে ২৮ জন প্রার্থী রয়েছেন। আলোচনায় থাকা প্যানেলগুলোর মধ্যে ছাত্রদল সমর্থিত ‘আবিদ-হামীম-মায়েদ পরিষদ’ এবং শিবির সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট সরাসরি মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে। ভিপি পদে আবিদুল ইসলাম খান (ছাত্রদল) এবং আবু সাদিক কায়েম (শিবির) অন্যতম আলোচিত প্রার্থী। পাশাপাশি জিএসে শেখ তানভীর বারী হামিম (ছাত্রদল),  এসএম ফরহাদ (শিবির), এজিএসে তানভীর আল হাদী মায়েদ (ছাত্রদল) ও মহিউদ্দিন খান (শিবির) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ ছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী শামীম হোসেন, উমামা ফাতেমা এবং বামপন্থী প্রতিরোধ পর্ষদের শেখ তাসনিম আফরোজ ইমি ও মেঘমল্লার বসুও প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নিজেদের অবস্থান তৈরি করেছেন।

আরও পড়ুন<<>> ক্ষমতায় ফিরতে কতটা প্রস্তুত বিএনপি?

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা ডাকসুর নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে ভিন্নমত পোষণ করেছেন। রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আইনুল ইসলাম মনে করেন, এখানে যারা নির্বাচিত হবেন তারা ভবিষ্যৎ জাতীয় নির্বাচনে প্রচারণায় প্রভাবশালী ভূমিকা রাখতে পারেন। কারণ ডাকসুর ভোটাররা দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা শিক্ষার্থী, যাদের স্থানীয় এলাকায়ও প্রভাব রয়েছে। ফলে এখানে কারা জয়ী হবেন, তা জাতীয় রাজনীতির জন্যও তাৎপর্যপূর্ণ।

তবে গণযোগাযোগ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক খোরশেদ আলম মনে করেন, ডাকসু নির্বাচন জাতীয় নির্বাচনে একটি বার্তা দেবে ঠিকই, কিন্তু এটি একমাত্র নির্ধারক হবে না। তার মতে, ডাকসু মূলত জনমত যাচাইয়ের একটি অগ্নিপরীক্ষা।

আরও পড়ুন<<>> ডাকসু নির্বাচনে হস্তক্ষেপের প্রশ্নই আসে না : সেনাবাহিনী

অন্যদিকে অধ্যাপক কাজী মাহবুবুর রহমান মনে করেন, ডাকসু মূলত শিক্ষার্থীদের নির্বাচন, যেখানে দাবি-দাওয়ার বিষয়গুলো সামনে আসে। জাতীয় রাজনীতিতে সরাসরি প্রভাব খুব একটা পড়বে না। তবে এটিও সত্য যে, এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নির্বাচিত নেতৃত্ব দেশের তরুণদের মনস্তাত্ত্বিক প্রবণতার প্রতিফলন ঘটায়। ফলে জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে তরুণ ভোটারদের অবস্থান বুঝতে ডাকসুর ফলাফল একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক হয়ে উঠবে।

সব মিলিয়ে এবারের ডাকসু নির্বাচন শুধু বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেই সীমাবদ্ধ নয়। এটি জাতীয় রাজনৈতিক অঙ্গনেও আলোচনার কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। এখানে ভোটযুদ্ধে জয়ী হওয়া মানে তরুণ প্রজন্মের একটি বড় অংশকে সঙ্গে নেয়া। আর সে ইঙ্গিতই হয়তো আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফলে প্রতিফলিত হবে।

আপন দেশ/এবি

মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়