
ছবি: আপন দেশ
একটি বৈষম্যমুক্ত, গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে কাজ করবে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ ও জাতীয় কবিতা পরিষদ।
বুধবার (১৩ আগস্ট) দুই সংগঠনের মধ্যে এক মতবিনিময় সভায় এ বিষয়ে ঐকমত্য হয়। জাতীয় কবিতা পরিষদ দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গঠনের চেষ্টা করছে। তারই অংশ হিসেবে গত সন্ধ্যায় ঢাকার তোপখানা রোডে অবস্থিত 'বাসদ ভবন'-এ সভা হয়।
জাতীয় কবিতা পরিষদের সভাপতি মোহন রায়হান সভায় তাদের লিখিত প্রস্তাবনা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ১৯৮৭ সালে সামরিক স্বৈরাচার এরশাদের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সময় প্রগতিশীল কবিরা জাতীয় কবিতা পরিষদ গঠন করেন। এ সংগঠন গণতান্ত্রিক আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। কিন্তু ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর কিছু 'দলদাস কবি' অস্ত্রের মুখে প্রতিষ্ঠাতাদের বের করে দেয়। এরপর সংগঠনটি আওয়ামী লীগের একটি অঙ্গ সংগঠনে পরিণত হয়।
আরও পড়ুন>>>তিস্তার পানি বিপৎসীমার ওপরে, প্লাবিত ২০ গ্রাম
মোহন রায়হান আরও বলেন, এ কবিরা আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বাড়ি, গাড়ি, প্লট ও পুরস্কারসহ নানা সুবিধা নিয়েছেন। তারা শেখ হাসিনার সরকারের দুর্নীতি, লুটপাট, গুম ও খুনের পক্ষে সাফাই গেয়েছেন। এমনকি ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানে গণহত্যার বিরুদ্ধেও তারা কোনো প্রতিবাদ জানাননি। তবে জাতীয় কবিতা পরিষদের প্রতিষ্ঠাতারা বরাবরই স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। তারা কলম, কণ্ঠ ও রাজপথে সক্রিয় ছিলেন। জুলাই বিপ্লবেও তারা সরাসরি অংশ নিয়েছেন।
তিনি বলেন, হাসিনার পতনের পর প্রতিষ্ঠাতারা জাতীয় কবিতা পরিষদকে পুনর্গঠন করেছেন। তাদের লক্ষ্য হলো একটি শৃঙ্খলাবদ্ধ, বৈষম্যহীন, গণতান্ত্রিক ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তোলা।
উপদেষ্টা কবি মতিন বৈরাগী বলেন, রাজনৈতিক নেতারা সচেতন ও সক্রিয় না হলে সাংস্কৃতিক বিপ্লব সম্ভব নয়। জাতীয় কবিতা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রেজাউদ্দিন স্টালিন বলেন, জুলাই বিপ্লবের পর মৌলবাদী শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে তারা প্রভাব বিস্তার করছে। এখনও পুলিশের দমন-পীড়ন চলছে। তিনি মনে করেন, প্রগতিশীল রাজনৈতিক শক্তির এগিয়ে যাওয়ার জন্য সাংস্কৃতিক বিপ্লব জরুরি।
চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সভাপতি নিখিল দাস এ উদ্যোগকে স্বাগত জানান। তিনি বলেন, রাজনীতিকে সংস্কৃতির কাছে ছুটে যেতে হয়। বাসদের সহ-সাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মীদের মধ্যে ঐক্য না থাকলে সুন্দর পরিবেশ তৈরি হয় না। তিনি ফ্যাসিবাদ, মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে একটি কবিতা সমাবেশের আয়োজন করার প্রস্তাব দেন।
বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, সংস্কৃতি ও রাজনীতিকে আলাদা করা যায় না। জারিগানের একজন শিল্পী অনেক সহজে যে কথা বলতে পারেন, একজন রাজনৈতিক নেতা তা পারেন না। বাসদের উপদেষ্টা কমরেড খালেকুজ্জামান বলেন, রাজনীতি হলো ইঞ্জিনের মতো, আর সংস্কৃতি হলো পেট্রলের মতো।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ছিল জনগণের যুদ্ধ, আওয়ামী লীগের নয়। তিনি আশা করেন, একটি সাংস্কৃতিক আন্দোলন এদেশের মানুষ গ্রহণ করবে। তিনি প্রত্যন্ত অঞ্চলে কবিতা পাঠ, গান ও নাচের অনুষ্ঠানের আয়োজনে সহযোগিতা করার আশ্বাস দেন।
সভায় উভয় সংগঠনের অনেক নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন। তারা একসঙ্গে কাজ করে একটি সুখী ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।
সভায় উপস্থিত ছিলেন- বাসদের সদস্য জুলফিকার আলী, সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরামের কেন্দ্রীয় দফতর সম্পাদক রুখশানা আফরোজ আশা, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের ঢাকা নগরের সভাপতি অনিক দাস, সাধারণ সম্পাদক রায়হান উদ্দিন, বাসদ নেতা আনোয়ার হোসেন প্রমুখ ও জাতীয় কবিতা পরিষদের পক্ষ থেকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কবি শ্যামল জাকারিয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক কবি নুরুন্নবী সোহেল, প্রচার সম্পাদক আসাদ কাজল, শান্তি ও শৃঙ্খলা সম্পাদক কবি ইউসুফ রেজা, দফতর সম্পাদক রোকন জোহুর, জনসংযোগ সম্পাদক রফিক হাসান, আইন সম্পাদক কবি শিমুল পারভীন, সদস্য– কবি শাহিন চৌধুরী, কবি বাবু হাবিবুল, কবি রফিক চৌধুরী, কবি কবীর হুমায়ূন, কবি সাম্য শাহ্, কবি তাসকিনা ইয়াসমিন, কবি সবুজ মনির, কবি রাসেল আহমেদ, কবি নাহিদ হাসান প্রমুখ সভায় উপস্থিত ছিলেন।
আপন দেশ/এমবি
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।