Apan Desh | আপন দেশ

গলছে বরফ, ঝুঁকিতে উপকূলবাসী

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ১০:৪৩, ২১ মে ২০২৫

গলছে বরফ, ঝুঁকিতে উপকূলবাসী

ছবি: সংগৃহীত

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে পৃথিবী। সম্প্রতি নতুন এক গবেষণায় বলা হয়েছে, বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমিত রাখলেও গ্রিনল্যান্ড ও অ্যান্টার্কটিকার বরফস্তর দ্রুত গলতে থাকবে। এতে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা কয়েক ফুট বেড়ে যাবে এবং উপকূলীয় অঞ্চল থেকে ব্যাপক জনসংখ্যা স্থানান্তরিত হতে বাধ্য হবে।  

আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানীদের একটি দল গ্রিনল্যান্ড ও অ্যান্টার্কটিকার বরফস্তর রক্ষার জন্য ‘নিরাপদ সীমা’ নির্ধারণ করতে গবেষণা চালিয়েছে। তারা উপগ্রহ থেকে প্রাপ্ত তথ্য, জলবায়ু মডেল এবং বরফের নমুনা, গভীর সমুদ্রের তলদেশের নমুনা ও অক্টোপাসের ডিএনএ-সহ অতীতের বিভিন্ন প্রমাণ বিশ্লেষণ করেছেন।  

গবেষণায় ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহ প্রভাব এড়াতে বিশ্ব নেতারা প্রাক-শিল্প স্তরের চেয়ে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমিত রাখার অঙ্গীকার করেছেন। তবে বর্তমানে বিশ্ব ২১০০ সাল নাগাদ ২.৯ ডিগ্রি উষ্ণায়নের দিকে এগোচ্ছে।  

মঙ্গলবার কমিউনিকেশনস আর্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট' জার্নালে প্রকাশিত গবেষণায় সবচেয়ে উদ্বেগজনক তথ্য হলো, ১.৫ ডিগ্রি উষ্ণায়নেও বরফস্তর রক্ষা করা সম্ভব নাও হতে পারে। বর্তমানে বিশ্বের উষ্ণায়নের মাত্রা ১.২ ডিগ্রি থাকলেও এটি বরফস্তর দ্রুত গলিয়ে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বিপজ্জনক হারে বাড়িয়ে দিতে পারে।  

গ্রিনল্যান্ড ও অ্যান্টার্কটিকার বরফস্তরে এতটুকু মিষ্টি পানি রয়েছে যে তা গলে গেলে বিশ্বব্যাপী সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা প্রায় ২১৩ ফুট বেড়ে যেতে পারে। ১৯৯০-এর দশক থেকে এ বরফস্তর হারানোর পরিমাণ চারগুণ বেড়েছে। বর্তমানে তারা প্রতি বছর প্রায় ৩৭০ বিলিয়ন টন বরফ হারাচ্ছে।  

গবেষণা বলছে, ১.৫ ডিগ্রি উষ্ণায়নেও বরফস্তর দ্রুত গলার প্রক্রিয়া রোধ করা যাবে না এবং আগামী কয়েক শতাব্দীতে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা কয়েক ফুট বেড়ে যাবে।  

ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্লেসিওলজিস্ট ও গবেষণার সহলেখক ক্রিস স্টোকস বলেন, ১.৫ ডিগ্রি উষ্ণায়নেও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ার গতি কমবে না, বরং তা দ্রুততর হবে।

বিশ্বের উপকূলীয় জনগোষ্ঠীর জন্য এটি অস্তিত্বের হুমকি। প্রায় ২৩ কোটি মানুষ সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে মাত্র ১ মিটার (৩.২ ফুট) উচ্চতায় বসবাস করে। গবেষণায় বলা হয়েছে, বরফস্তরের সামান্য পরিবর্তনও বিশ্বের উপকূলরেখা আমূল বদলে দেবে, যা কয়েক কোটি মানুষকে বাস্তুচ্যুত করবে।  

ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্লেসিওলজিস্ট ও গবেষণার সহলেখক জোনাথন ব্যামবার বলেন, এ পরিস্থিতিতে আমরা আধুনিক সভ্যতার ইতিহাসে দেখা সবচেয়ে বড় মানব স্থানান্তর দেখতে পাব।

গবেষকরা সতর্ক করেছেন, জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমাতে না পারলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে আশার আলো খুব কমই দেখা যাচ্ছে। তবে জলবায়ু লক্ষ্য অর্জনের চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে, কারণ উষ্ণায়নের প্রতিটি ভগ্নাংশই ভয়াবহ প্রভাব ফেলবে।  

স্টোকস বলেন, ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উষ্ণায়ন সীমিত রাখা একটি বড় অর্জন হবে। এটি আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত, কিন্তু এটি সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি বা বরফ গলা কমাবে না।

আপন দেশ/জেড

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়