Apan Desh | আপন দেশ

রাবির ইতিহাস বিভাগে শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ

রাবি প্রতিনিধি 

প্রকাশিত: ১০:৫৪, ২৬ অক্টোবর ২০২৫

রাবির ইতিহাস বিভাগে শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ

ছবি : আপন দেশ

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক নিয়োগ বোর্ড গঠিত হয় ০৮ অক্টোবর। তাদের অধিনে ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক নিয়োগে মেটিকুলাস ডিজাইনে দুর্নীতির আশ্রয় গ্রহণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন একাধিক চাকরিপ্রত্যাশি। 

ইতিহাস বিভাগের সভাপতির ঘনিষ্ঠ ও আলোচিত প্রার্থীদেরই লিখিত পরীক্ষায় টিকে আসা ও চাকরির সুপারিশপ্রাপ্ত হওয়াকে কেন্দ্র করে এ গুঞ্জন আরো প্রবল হয়েছে। এদিকে, নিয়োগ বোর্ডের এক্সপার্টের নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক প্রার্থীকে শিক্ষক হিসেবে সুপারিশ করাকে কেন্দ্র করে এ গুঞ্জন আরও তীব্র হয়েছে বলে জানা যায়।

একাধিক প্রার্থীর অভিযোগ, পরীক্ষার আগের রাতে বিভাগের এক বিশেষ শিক্ষক কর্তৃক নিয়োগ বোর্ডে সুপারিশপ্রাপ্ত ফাহিমাকে লিখিত পরীক্ষা সংক্রান্ত মেসেজ দিতে গিয়ে ইতিহাস বিভাগের একজন ম্যাডামের কাছে মেসেজটি চলে যায়। এছাড়াও ইতিহাস বিভাগের সে আলোচিত প্রার্থী ফাহিমার সঙ্গে আয়নাল হকের একই বেঞ্চে বসে পরীক্ষা দেয়া ও শিক্ষক হিসেবে সুপারিশপ্রাপ্ত হওয়ার বিষয়টি মেটিকুলাস ডিজাইনে করা হয়েছে বলে বিভাগের অনেক প্রার্থী মন্তব্য করেছেন। তারা দুজনই ইতিহাস বিভাগের বর্তমান সভাপতি ড. মো. শেরেজ্জামানের অতি ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। 

এদিকে, এক প্রার্থীর সঙ্গে নিয়োগ বোর্ডের এক্সপার্টের কথোপকথনের একটি অডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে৷ এতে এক্সপার্টকে বলতে শোনা যায়, নিয়োগ বোর্ডে থাকা উপাচার্য, উপ উপাচার্যসহ বোর্ডের ৪ জন সদস্য এক মতের অনুসারী। তুমি এ লাইনে না এসে ভুল করেছো।

খোঁজ নিয়ে আরও জানা যায়, গত ০৮ অক্টোবর ইতিহাস বিভাগের লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে একটি চক্র বিভিন্ন প্রলোভনে বিভাগের সভাপতি ড. মো. শেরেজ্জামান ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠে। যাদের একটি বড় অংশ বিগত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের ছাত্রসংগঠন নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নেতাকর্মী ও তাদের স্ত্রী। তারা ফ্যাসিস্ট আমলে দলগত পরিচয়কে কাজে লাগিয়ে ভাল রেজাল্ট করার দৌড়ে এগিয়ে থাকে। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো রাহেনা আক্তার, সমাপ্তি আক্তার জুই, আদিলা আক্তার নিপা, ফাহিমা খাতুন লাবনী ও মো: আইনাল হক। 

শিক্ষক নিয়োগ বোর্ডে সুপারিশ পাওয়া ছাত্রলীগ নেতা আহমেদ সাগরের স্ত্রী, ছাত্রলীগ কর্মী আদিলা আক্তার নিপা ও ছাত্রলীগ নেতা শিহাব জহুরীর স্ত্রী ফাহিমা খাতুন লাবনী একই দলগত কারণে বিভাগে ভালো রেজাল্ট করেছে। 

ইতিহাস বিভাগের সভাপতি তার পছন্দের প্রার্থীদের টিকিয়ে আনতে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষ থেকে চালু হওয়া ইতিহাস বিভাগের একটি বিশেষ কোর্স হিস্টোরি অব ম্যানকাইন্ড। যে কোর্সের শিক্ষার্থীদের এখনো পড়াশোনা শেষ হয়নি এবং যারা নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশই নিতে পারেনি এবং যা ইতিহাসের কোর্স কিনা সে বিষয়ে ইতিহাস বিভাগের শিক্ষকদেরই দ্বিধাগ্রস্ততা তৈরী করে এমন একটি কোর্স থেকে প্রশ্ন করতে ইতিহাসের শিক্ষক নিয়োগ বোর্ডকে উদ্বুদ্ধ করে। 

আরও পড়ুন<<>>রাবির চিকিৎসা মনোবিজ্ঞান বিভাগে শাটডাউন, চেয়ারম্যানের পদত্যাগ দাবি

অথচ ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক নিয়োগ বোর্ডের সকল প্রার্থীই এই কোর্স পড়েনি। এ ধরনের প্রশ্নের সঙ্গে তারা সম্পৃক্ত নয়। প্রশ্নটি ছিলো, কৃষি বিপ্লবকে কি কারণে প্রতারণার বিপ্লব বলা হয়? এ প্রশ্নটি ইসরায়েলের হিব্রু বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক ইউভাল নোয়াহ হারারির বই 'স্যাপিয়েন্স: অ্যা ব্রিফ হিস্টি অব হিউম্যান কাইন্ড' বইয়ের একটি মেটাফোর। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নিয়োগ বোর্ডের প্রার্থী গোলাম রব্বানী বুলবুল বক্তব্য দিতে অস্বীকৃতি জানান। তবে বারংবার বলার পর তিনি বলেন, ইতিহাস নিয়োগ বোর্ডে যেখান থেকে প্রশ্ন করা হয়েছে সে কোর্সটি কিছুদিন আগে বিভাগে চালু করা হয়েছে। এ কোর্স যারা শুরু করেছেন তারা এখনো মাস্টার্সে অধ্যায়নরত। এছাড়াও নিয়োগের আগের রাতে (০৭ অক্টোবর) জাতীয় দৈনিক ইনকিলাবসহ বিভিন্ন পত্রিকায় "ইতিহাসের বিভাগের নিয়োগের দৌড়ে ডজনখানেক ছাত্রলীগ নেতাকর্মী" শীর্ষক নিউজ প্রকাশিত হলেও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বাছাই করেন নিয়োগ বোর্ড। 

তিনি আরও বলেন, ইতিহাসের নিয়োগ বোর্ডে বহির্ভূত প্রশ্ন করা হয়েছে। ইহুদি বুদ্ধিজীবীর থিওরি ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষার প্রশ্নে কিভাবে আসে। কৃষি বিপ্লব সমাজের আশীর্বাদ। কিন্তু "কৃষি বিপ্লব মানব সমাজের সবচেয়ে বড় প্রতারণা" এ ধরনের প্রশ্ন সমাজের বাস্তবতা বিবর্জিত এবং বিতর্কিত বলে জানান তিনি।

আরেক প্রার্থী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, লিখিত পরীক্ষায় প্রচন্ড অনিয়ম ও চারটি প্রশ্নের মধ্যে দুটিই প্রশ্ন করা হয়েছে ভুল। যেমন 'কৃষি বিপ্লবকে প্রতারণা বিপ্লব বলা হয়' এমন প্রশ্নটি ইতিহাসের সঙ্গে জড়িত না। ইউভ্যাল নোয়া হারারি তার 'দ্যা স্যাপিয়েনস' গ্রন্থে কৃষি বিপ্লবকে প্রতারণা বিপ্লব বলে বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন সেটি কিভাবে ইতিহাসের শিক্ষক নিয়োগ বোর্ডে প্রশ্ন আকারে আসে সেটি আমার বোধগম্য নয়। এমন উদ্ভট প্রশ্ন করে একটি বিশেষ মহলকে সুবিধা দেয়া হয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

তবে এমন অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করে ইতিহাস বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. শেরেজ্জামান বলেন, যেই দুটি প্রশ্ন নিয়ে অভিযোগ উঠেছে সেগুলো ইতিহাস বিভাগের সিলেবাসের অন্তর্ভুক্ত। এখন যদি কেউ প্রশ্নের প্যাটার্ন ধরতে না পারে সেটা তাদের ব্যর্থতা এর দায় আমরা নিবো না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দীন খান বলেন, কৃষি বিপ্লব ইতিহাস বিভাগের সিলেবাসের অন্তর্ভুক্ত। যারা বহির্ভূত প্রশ্ন বলছেন তারা ঠিক বলছেন না। ইতিহাস বিভাগের প্রথমে যে সিলেবাস পড়ানো সেখানে কৃষি বিপ্লব ইতিহাস নিয়ে পড়ানো হয় বলে জানান তিনি।

আপন দেশ/জেডআই

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়