
ছবি: আপন দেশ
যাদের মাছ-মাংস কেনার সামর্থ্য নেই, তারা তুলনামুলক সহজলভ্য সবজি আর ডিম খেয়ে কোনো রকমে দিন পার করেন। কিন্তু গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই সেসব স্বল্প আয়ের মানুষ সীমাহিন কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। কারণ সবজির বাজার এতটাই চড়া যে আলু ছাড়া কিছু কিনতে পারছেন না তারা। ডিমের দামও তাদের কষ্ট আরও বাড়িয়ে দিয়েছিল। এ সপ্তাহেও নিত্যপণ্যের বাজারে ভোক্তাদের জন্য কোনো স্বস্তির খবর নেই।
কয়েক সপ্তাহ ধরেই সবজির বাজারে অস্থিরতা চলছে। কমার পরিবর্তে আরও বেড়েছে মুরগির দাম। সব ধরনের মাছের বাজারে আগুন লেগেছে। ভরা মৌসুমেও ইলিশের সরবরাহ কম, দাম তাই আকাশচুম্বী। তবে ডিমের দামে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে।
সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) সকালে রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
এদির রাজধানীর কমলাপুর কাঁচা বাজারে গিয়ে দেখা যায় ৮০-১০০ টাকার নিচে কোনো সবজি নেই। আলু, পেঁপে ছাড়াও ৮০ টাকার নিচে কোনো সবজি পাওয়া কষ্টকর। বাজারে নতুন গোলাকৃতির বেগুন বিক্রি হচ্ছে ১০০-১৪০ টাকা কেজি দরে। বরবটি, করলা, চিচিঙ্গা, কচুর লতি বাজারভেদে দাম ১০০-১২০ টাকা পর্যন্ত। এক কেজি ধুন্দল কিনতে হচ্ছে ৮০-১০০ টাকায়। ঝিঙ্গা, পটল, ঢ্যাঁড়সও ৮০ টাকার আশেপাশে বিক্রি করতে দেখা গেছে।
তবে আলুর দাম তুলনামূলক স্থিতিশীল আছে। ঢাকার বাজারে আলু ২৫–৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। কম দামের সবজির মধ্যে রয়েছে পেঁপে, যা প্রতি কেজি ৩৫–৪০ টাকা। শাকের বাজারও চড়া। লাল শাক, কলমি ও হেলেঞ্চা বিক্রি হচ্ছে আঁটিপ্রতি ২০ টাকায়, আর পুইশাকের দাম প্রতি আঁটিতে ৪০–৫০ টাকা।
মাছের বাজারও অস্থির হয়ে উঠেছে। চাষের মাছের মধ্যে রুই ও কাতলা ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা, ছোট আকারের পাবদা ৪০০ টাকা, মাঝারি সাইজের ৫০০-৬০০ টাকা, শিং ৪০০-৫০০ টাকা, টেংরা ৬০০-৭০০ টাকা, পুঁটি ২০০-২৫০ টাকা, সরপুঁটি ৩০০-৪৫০ টাকা, তেলাপিয়া ২৫০-৩০০ টাকা, নাইলোটিকা ২২০-২৮০ টাকা, কৈ ২০০-২২০ টাকা এবং পাঙাস ও সিলভার কার্প ২৫০–২৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
আরও পড়ুন<<>> নিত্যপণ্যের অসহনীয় দামে দিশাহারা স্বল্প আয়ের মানুষ
কোরাল বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকায়, আইড় ৬০০ থেকে ৭৫০ টাকায়। চিংড়ি (বাগদা ও গলদা) আকারভেদে ৭৫০ থেকে ১২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ছোট চিংড়ির দাম কেজিপ্রতি প্রায় ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা।
ইলিশের মৌসুম হলেও বাজারে সরবরাহ পর্যাপ্ত নয়। অল্প যে পরিমাণ আসছে, দাম এত বেশি যে সাধারণ ভোক্তার পক্ষে কেনা প্রায় অসম্ভব। খুচরা বাজারে এক থেকে দেড় কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২৪০০-২৫০০ টাকায়। ৫০০-৭০০ গ্রাম ইলিশ মিলছে ১৫০০ টাকায়, এক কেজির কিছু কম ওজনের ইলিশ ১৮০০ থেকে ২০০০ টাকায় এবং বড় ইলিশ (২ থেকে ২.৫ কেজি) বিক্রি হচ্ছে ৩০০০-৩৫০০ টাকায়।
সপ্তাহের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিপ্রতি ১০–২০ টাকা বেড়ে ১৮০–২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আগে এর দাম ছিল ১৭০–১৮০ টাকা। কারওয়ান বাজারের মুরগি বিক্রেতা বলেন, ‘সবজি-মাছের চাহিদা বেশি হওয়ায় দাম কিছুটা বেড়েছে। তবে ২০০ টাকা পর্যন্ত মুরগির দাম স্বাভাবিক।’
তবে ডিমের দামে কিছুটা স্বস্তি মিলেছে। সরবরাহ বাড়ায় এলাকাভেদে প্রতি ডজন ডিমের দাম ৫–১০ টাকা কমেছে। আগে যেখানে লাল ডিম বিক্রি হচ্ছিল ১৫০ টাকায়, এখন তা নেমে এসেছে ১৪০ টাকায়। তবে কিছু দোকানে এখনো এক হালি ডিম ৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে গরু ও খাসির মাংসের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। বাজারে গরুর মাংস কেজিপ্রতি ৭৫০-৭৮০ টাকা এবং খাসির মাংস ১১০০-১২০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, পশুর সরবরাহ স্বাভাবিক থাকায় দাম বাড়েনি।
সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী, আগামী আমন মৌসুমের আগে বাজার স্থিতিশীল রাখতে বেসরকারিভাবে ৫ লাখ টন চাল আমদানি করা হবে। এছাড়া সরকারি সংস্থার মাধ্যমে ৪ লাখ টন চাল ভর্তুকিমূল্যে বিক্রি হবে। বর্তমানে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মিনিকেট চাল ৭২ থেকে ৮৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। মানভেদে প্রতি কেজি নাজিরশাইল চালের দাম এখন ৭৫-৯৫ টাকা। ব্রি-২৮ চাল ৬২ টাকা ও মোটা ধরনের স্বর্ণা চাল ৫৮-৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
আমদানির প্রভাব পড়েছে ডিম, পেঁয়াজসহ কিছু পণ্যের দামে। সপ্তাহ দুয়েক আগে যেসব পণ্যের দাম বাড়ছিল, সেগুলোর দাম এখন স্থিতিশীল।
আপন দেশ/জেডআই
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।