
বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচের দৃশ্য
দেশের ক্রিকেটের বড় তারকা ছিলেন তামিম, মুশফিক, মাহমুদউল্লাহ এবং সাকিব আল হাসান। প্রথম তিনজন অবসরে আর তৃতীয়জন দেশছাড়া। তাদের অনুপোস্থিতিতে ক্লান্তিকাল পার করছে বাংলাদেশের ক্রিকেট। তরুণদের কেউ কেউ জ্বলে উঠলেও, ধারাবাহিকতা না থাকায় ম্যাচ শেষে হতাশা সঙ্গী হচ্ছে টাইগারদের। যে কারণে সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো আইসিসির সহযোগি দেশের বিপক্ষে সিরিজ হারতে হয়েছে লাল সবুজ প্রতিনিধিদের।
পরাজয়ের বৃত্ত ভাঙতে পাকিস্তানে জয় দিয়ে সফর শুরু করার প্রত্যাশায় বড় ধাক্কা খেয়েছে লিটন দাসের দল। হার দিয়েই টি-টোয়েন্টি সিরিজ শুরু করেছে বাংলাদেশ দল। লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশকে ৩৭ রানে হারিয়েছে পাকিস্তান।
অধিনায়ক সালমান আগার ৫৬, শাদাব খানের ৪৮ ও পিএসএলের আসরসেরা ক্রিকেটার হাসান নাওয়াজের ৪৪ রানে ভর করে ৭ উইকেটে ২০১ রান তোলে পাকিস্তান। জবাবে লিটন দাসের ৪৮, জাকের আলীর ৩৬ ও তানজিদ তামিমের ৩১ রান সত্ত্বেও ১৬৪ রানে অলআউট হয়ে যায় বাংলাদেশ।
বুধবার (২৯ মে) রাতে টস জিতে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতেই ধাক্কা খায় স্বাগতিকরা। ম্যাচের তৃতীয় বলেই সাইম আইয়ুবকে ‘গোল্ডেন ডাক’ উপহার দেন শেখ মেহেদি। দ্বিতীয় ওভার করতে এসে দ্বিতীয় বলেই পাকিস্তানের ফর্মে থাকা ওপেনার ফখর জামানকে ঝটকা দেন শরিফুল। তার গুড লেন্থে করা বলে ব্যাট ছোঁয়াতে পারেননি ফখর। ফলাফল লেগ বিফোর উইকেট। এর মধ্য দিয়ে নিজের ৪৫তম আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচে উইকেট শিকারের ফিফটি করেন শরিফুল ইসলাম।
তৃতীয় উইকেটে জুটি বাধে পাকিস্তান। সালমানের সঙ্গে ৪৮ রানের জুটি গড়ে আউট হওয়ার আগে মোহাম্মদ হারিস করেন ১৮ বলে ৩১ রান। চতুর্থ উইকেটে নাওয়াজকে নিয়ে এর পর ৬৫ রানের জুটি গড়েন অধিনায়ক। ২৮ বলে ফিফটি তোলার পর তাকে থামান হাসান মাহমুদ। ৮ চার, ১ ছক্কায় ৩৪ বলে ৫৬ রান আসে সালমানের ব্যাটে। এর কিছুক্ষণ পর নাওয়াজকে ফেরান রিশাদ হোসেন। ২২ বলে ২ চার, ৪ ছক্কায় ৪৪ রান করেন তিনি। এর পর রানের গতিতে কিছুটা ভাটা পড়ে পাকিস্তানের। কিন্তু শেষ দিকে শাদাবের ৫ চার, ২ ছক্কায় ২৫ বলে ৪৮ রানের ঝড়ো ইনিংসে পাকিস্তানের সংগ্রহ দুশো পেরিয়ে যায়। শরিফুল দুটি এবং মেহেদি, হাসান, তানজিম, রিশাদ ও শামীম প্রত্যেকেই একটি করে উইকেট শিকার করেন।
রান তাড়ায় ২০১৮ সালে কলম্বোতে ২১৫ রান করে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। টি-টোয়েন্টিতে দুশোর বেশি তাড়া করে জেতার ওই একটিই কীর্তি রয়েছে। জবাবে ভালো শুরু এনে দেন তানজিদ হাসান তামিম। ফাহিম আশরাফের করা প্রথম ওভারের শেষ তিন বলে চার-ছক্কা হাঁকিয়ে বাংলাদেশ তোলে ১১ রান। কিন্তু দ্বিতীয় ওভারে হাসান আলির সামনে খেই হারান দেশের দ্রুততম সেঞ্চুরিয়ান পারভেজ হোসেন ইমন। তিন বল ডট খেলার চাপ সামলাতে না পেরে উইকেট দিয়ে আসেন। আমিরাতের বিপক্ষে সেঞ্চুরির পরের ইনিংসে ফিরেছিলেন খালি হাতে। এদিন করেন ৫ বলে ৪ রান। ইমন ফিরলেও সাবলীল ছিলেন তানজিদ। জোড়া ছক্কায় আবরার আহমেদকে বোলিংয়ে স্বাগতম জানান। পরের ওভারে হাসানকে মারেন জোড়া চার। কিন্তু পরের বলেই ১৭ বলে ৩১ রানে হাসানের শিকার বনে ফিরতে হয় সাজঘরে। পাওয়ার প্লেতে বাংলাদেশ তোলে ২ উইকেটে ৪৫ রান।
তৃতীয় উইকেটে কিছুটা থিতু হয়ে হাত খুলতে থাকেন অধিনায়ক লিটন দাস। একক নৈপুণ্যে তাওহীদ হৃদয়কে নিয়ে জুটি গড়েন ৬৩ রানের। হৃদয়ের ব্যাট নিষ্প্রভ থাকলেও অধিনায়ক খেলেন ৩০ বলে ৪৮ রানের ইনিংস। যেখানে ৪ একটি হলেও ছক্কা ছিল ৩টি। দলের রান একশ হওয়ার পরপরই আবার ধাক্কা। ৮ বলে নেই ৩ উইকেট। প্রথমে লিটনকে ফেরান শাদাব। এরপর ২২ বলে ১৭ রান করা হৃদয় ও ২ বলে ৪ রান করে শামীম হাঁটেন সাজঘরের দিকে। ১০৮ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ।
পরের অংশে বাংলাদেশকে একা যতদূর পারেন টেনে নিয়ে যান জাকের আলী অনিক। ৩ ছক্কা, ১ চারে খেলেন ২১ বলে ৩৬ রানের ইনিংস। কিন্তু ১৮তম ওভারে জাকের ও তানজিমকে জোড়া শিকার বানিয়ে ম্যাচ একপেশে করে দেন হাসান আলি। তিনি একাই শিকার ধরেন ৫টি। টি-টোয়েন্টিতে এটিই তার ক্যারিয়ারসেরা নৈপুণ্য। শাদাব খান নেন ২ উইকেট। আর তাতে বাংলাদেশের ইনিংস গুটিয়ে যায় ১৬৪ রানে।
শুক্রবার (৩০ মে) একই মাঠে সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি ম্যাচে স্বাগতিকদের মুখোমুখি হবে লাল সবুজ দল।
আপন দেশ/জেডঅ
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।