Apan Desh | আপন দেশ

এ যুগে নফসকে নিয়ন্ত্রণে রাখার ১০ উপায়

আপন দেশ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৫:৪০, ৭ আগস্ট ২০২৫

এ যুগে নফসকে নিয়ন্ত্রণে রাখার ১০ উপায়

প্রতীকী ছবি

আজকাল আমরা এমন এক দ্রুতগতির জীবনে অভ্যস্ত হয়েছি, যেখানে সবকিছুই চাই তাৎক্ষণিকভাবে। নতুন ফোন বা ফ্যাশনেবল কিছু দেখলেই সেটা পাওয়ার জন্য মন অস্থির হয়ে ওঠে। এ 'ইনস্ট্যান্ট গ্র্যাটিফিকেশন' বা তাৎক্ষণিক তৃপ্তির সংস্কৃতি আমাদের ধৈর্য ও  সংযমের ক্ষমতাকে কমিয়ে দিচ্ছে। অথচ ইসলামে এ দুটি গুণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

ইসলামী পরিভাষায়, আমাদের ভেতরের এ অস্থির প্রবৃত্তিকেই বলা হয় নফস। এর আক্ষরিক অর্থ 'আত্মা' বা 'সত্তা'। তবে এটি আমাদের মন্দ কাজের দিকে প্ররোচিত করে। পবিত্র কোরআনে যেমন বলা হয়েছে, আমি আমার নফসকে পবিত্র মনে করি না, নিশ্চয়ই নফস মন্দ কাজ প্রবণ। (সুরা ইউসুফ, আয়াত: ৫৩)

নফসকে তার ইচ্ছেমতো চলতে দিলে তা আরও শক্তিশালী হয়। আমাদের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে। তাই এ নফসকে নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি। মহানবী (সা.) ও ইসলামি চিন্তাবিদগণ এ বিষয়ে আমাদের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দিয়েছেন। ইমাম ইবনে কাইয়্যিম (রহ.) এর উপদেশসহ আরও কিছু ব্যবহারিক পদ্ধতি নিচে আলোচনা করা হলো-

১. অতিরিক্ত সামাজিকতা পরিহার
ইসলামে সামাজিক মেলামেশা উৎসাহিত হলেও তা সীমিত ও ভারসাম্যপূর্ণ হওয়া উচিত। ইমাম ইবনে কাইয়্যিম বলেন, অতিরিক্ত সামাজিকতা হৃদয়ের স্বচ্ছতাকে নষ্ট করে। যখন কথাবার্তা অর্থহীন হয়ে যায়, গীবত বা অপ্রয়োজনীয় ঠাট্টা-তামাশায় রূপ নেয়, তখন বুঝতে হবে যে আপনি অতিরিক্ত সামাজিকতায় জড়িয়ে পড়ছেন। এর ফলে আল্লাহর ইবাদতের জন্য আমাদের সময় ও মনোযোগ কমে যায়। তাই উপকারী সঙ্গী ছাড়া অন্যদের সঙ্গে মেলামেশার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকুন।

২. অবাস্তব কল্পনা থেকে দূরে থাকা
অবাস্তব বা অলীক কল্পনা মানুষকে বাস্তব থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। এটি হৃদয়ের জন্য ক্ষতিকর। যখন আমরা আমাদের জীবনের পরিস্থিতি নিয়ে অভিযোগ করি, ভাবি যে সবকিছু ভিন্ন হলে ভালো হতো, তখন এটি আমাদের কৃতজ্ঞতা ও ধৈর্য নষ্ট করে দেয়। আল্লাহ প্রতিদিন আমাদের যে নেয়ামত দিচ্ছেন, তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন। এতে অপ্রয়োজনীয় ও অবাস্তব ইচ্ছা কমে আসবে।

৩. আল্লাহ ছাড়া অন্য কিছুর প্রতি আসক্তি ত্যাগ
অর্থ, পদ-পদবি বা মানুষের প্রতি অতিরিক্ত আসক্তি আমাদের মনোবলকে দুর্বল করে দেয়। এতে আল্লাহর ইবাদতের জন্য আমাদের সময় ও শক্তি কমে আসে। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, যারা ঈমান এনেছে, তাদের হৃদয় আল্লাহর স্মরণে প্রশান্তি লাভ করে। (সুরা রা'দ, আয়াত: ২৮)। তাই নিয়মিত যিকির করুন, নামাজে মনোযোগ বাড়ান। প্রতিদিন কিছু সময় কোরআন তিলাওয়াতের জন্য বরাদ্দ রাখুন।

৪. অতিরিক্ত খাওয়া নিয়ন্ত্রণ
ইসলামে অতিরিক্ত খাওয়াকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। মহানবী (সা.) বলেছেন, মানুষের পেটের চেয়ে খারাপ কোনো পাত্র নেই। তার পিঠ সোজা রাখতে কয়েক মুঠো খাবারই যথেষ্ট। যদি অবশ্যই পূর্ণ করতে হয়, তবে এক-তৃতীয়াংশ খাবার, এক-তৃতীয়াংশ পানি ও এক-তৃতীয়াংশ বাতাসের জন্য রাখবে। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৩,৩৪৯)। অতিরিক্ত খাওয়া নফসের চাহিদাকে আরও বাড়িয়ে দেয় ও শরীরকে অলস করে তোলে। তাই পরিমিত খাবার গ্রহণ করুন। খাওয়ার সময় সুন্নাহ মেনে চলুন।

৫. অতিরিক্ত ঘুম এড়ানো
অতিরিক্ত ঘুম শারীরিক ও আধ্যাত্মিকভাবে ক্ষতিকর। ইমাম ইবনে কাইয়্যিম (রহ.) বলেন, এটি হৃদয়কে দুর্বল করে। অতিরিক্ত ঘুমের কারণে আমরা ফজর নামাজের মতো গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত মিস করে ফেলি। তাই ইশার পর তাড়াতাড়ি ঘুমানোর চেষ্টা করুন। ফজরের জন্য অ্যালার্ম সেট করুন। সকালে ঘুম থেকে উঠে ইবাদত ও সৃজনশীল কাজের মাধ্যমে দিনের শুরু করুন।

৬. নিয়ত নবায়ন করা
প্রতিটি কাজ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করার চেষ্টা করুন। প্রতিটি কাজের আগে আপনার নিয়ত যাচাই করুন। যেমন, খাওয়ার আগে ভাবুন, আমি খাচ্ছি যেন আমার শরীর সুস্থ থাকে ও ইবাদতের শক্তি পাই। এভাবে নিয়তকে আল্লাহর পথে পরিচালিত করলে নফসও শৃঙ্খলায় থাকবে।

৭. আত্মপর্যালোচনা ও দোয়া
নফসকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে নিজের ভুলত্রুটি সম্পর্কে সচেতন হওয়া জরুরি। প্রতিদিন ঘুমানোর আগে নিজের কাজগুলো পর্যালোচনা করুন। আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা (ইস্তিগফার) করুন। পাশাপাশি আল্লাহর কাছে সাহায্য চেয়ে দোয়া করুন। কোরআনের এ শক্তিশালী দোয়াটি নিয়মিত পড়ুন: “রব্বিশ-রাহলী, সদরী, ওয়া-ইয়াস্‌সিরলী, আম্‌রী” (হে আমার রব, আমার অন্তরকে প্রশস্ত করুন, আমার কাজকে সহজ করুন)।

৮. সময় ব্যবস্থাপনা
অপ্রয়োজনীয় কাজে সময় নষ্ট করা হলে নফসের ইচ্ছাকে প্রশ্রয় দেয়া হয়। তাই প্রতিদিনের জন্য একটি রুটিন তৈরি করুন, যেখানে ইবাদত, কাজ, বিশ্রাম ও সামাজিকতার জন্য নির্দিষ্ট সময় থাকবে। সময়ের সঠিক ব্যবহার নফসকে শৃঙ্খলায় রাখতে সাহায্য করবে।

৯. সুন্নাহ মেনে চলা
নবীজি (সা.)-এর জীবনধারা অনুসরণ করলে নফস নিয়ন্ত্রণে রাখা সহজ হয়। সুন্নাহ অনুযায়ী খাওয়া, ঘুমানো, সাজসজ্জা ও  যিকির করলে নফস আল্লাহর পথে থাকবে। নিয়মিত সুন্নত নামাজ ও যিকির নফসের অপ্রয়োজনীয় ইচ্ছাকে কমিয়ে দেবে।

১০. সৎ সঙ্গী নির্বাচন
আপনার সঙ্গী আপনার নফসের ওপর গভীর প্রভাব ফেলে। সৎ-আল্লাহভীরু সঙ্গী আপনাকে ইবাদত ও সংযমের পথে উৎসাহিত করবে। মহানবী (সা.) বলেছেন, মানুষ তার সঙ্গীর ধর্মের উপর থাকে। (সুনান আবু দাউদ, হাদিস: ৪,৮৩৩)। তাই এমন বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটান যারা আপনাকে আল্লাহর স্মরণ ও সৎকাজে উৎসাহ দেয়।

নফস নিয়ন্ত্রণ একটি দীর্ঘমেয়াদী সংগ্রাম। তবে এর মাধ্যমে আমরা আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে পারি। এ ১০টি উপায় অনুসরণ করে আমরা আমাদের নফসকে শৃঙ্খলায় আনতে পারি। আল্লাহ তা'আলা বলেন, যারা আল্লাহর জন্য সংগ্রাম করে, আমি অবশ্যই তাদের পথ দেখাব। (সুরা আনকাবুত, আয়াত: ৬৯)

আপন দেশ/এমবি

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়