Apan Desh | আপন দেশ

অধ্যাপক ইউনূস-তারেক রহমানের বৈঠক ঘিরে জল্পনা-কল্পনা

নিজস্ব প্রতিবদেক

প্রকাশিত: ১৬:১১, ১১ জুন ২০২৫

অধ্যাপক ইউনূস-তারেক রহমানের বৈঠক ঘিরে জল্পনা-কল্পনা

অধ্যাপক ইউনূস ও তারেক রহমান।

যুক্তরাজ্যে চার দিনের সরকারি সফরে রয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এ সফরকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে ব্যাপক আলোচনা। বিশেষ করে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে ১৩ জুন লন্ডনে অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বহুল প্রতীক্ষিত বৈঠক।

বিএনপির পক্ষ থেকে বৈঠকটি নিয়ে এসেছে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংবাদ সম্মেলনে বলেন, এ বৈঠক হতে পারে বাংলাদেশের রাজনীতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়। বৈঠকটি আমাদের দলের স্থায়ী কমিটির পক্ষ থেকে স্বাগত জানানো হয়েছে। আমরা আশাবাদী—এটি রাজনৈতিক সংকট নিরসনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হবে লন্ডনের অভিজাত ডরচেস্টার হোটেলে। স্থানীয় সময় অনুযায়ী, শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে ১১টা পর্যন্ত বৈঠকের সময় নির্ধারণ করা হয়েছে।

গত কয়েক মাস ধরে দেশের রাজনীতিতে অস্থিরতা বিরাজ করছিল। জাতীয় নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় ঘোষণা কিছুটা স্বস্তি দিলেও তা বিএনপি মেনে নেয়নি। ফলে ভোট নিয়ে অনিশ্চয়তা এখনো কাটেনি। এ অবস্থায় তারেক রহমান ও অধ্যাপক ইউনূসের বৈঠককে অনেকে দেখছেন একটি 'গেম চেঞ্জার' হিসেবে।

আরও পড়ুন>>>গোটা জাতি আজ লন্ডনের দিকে তাকিয়ে: রিজভী

বিএনপির একটি উচ্চপর্যায়ের সূত্র জানায়, মে মাসের শুরুতেই ইউনূসের সফর চূড়ান্ত হয়। তখন থেকেই বিএনপি ভাবছিল—এ সময় তারেক রহমানের সঙ্গে একটি সৌজন্য সাক্ষাৎ সম্ভব কি না। 

এদিকে, রাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়াতে থাকে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে শপথ না পড়ানো, রাজধানীতে আন্দোলন, এনসিপির সঙ্গে বিরোধ—এসব মিলিয়ে সরকারের সঙ্গে বিরূপ সম্পর্ক তৈরি হয়।

তারেক রহমান ২৮ মে এক সমাবেশে বলেন, ডিসেম্বারের মধ্যেই নির্বাচন দিতে হবে। এরপর প্রধান উপদেষ্টা এপ্রিলের মধ্যে ভোটের সম্ভাব্য সময় জানান। কিন্তু বিএনপি এতে সন্তুষ্ট হতে পারেনি। বৈঠকটি চূড়ান্ত করতে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াও বিশেষ ভূমিকা রাখেন বলে জানা গেছে। 

রাজনৈতিক মহল এ সাক্ষাৎকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র বলছে, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তারেক রহমানের সাক্ষাৎ ফলপ্রসূ হলে নির্বাচনের সম্ভাব্য সময়, গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার, জুলাই সনদসহ আরও অনেক বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকার ও বিএনপির যে দূরত্ব বা মতবিরোধ সৃষ্টি হয়েছে, সেটা কমে আসতে পারে।

অধ্যাপক ইউনূস-তারেক রহমানের বৈঠক নিয়ে সবার কৌতূহল

বিশেষ করে সরকারের দিক থেকে বাড়তি আগ্রহে সাক্ষাতের সময় নির্ধারণ হয়। এ বিষয়ে গত সোমবার রাতে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পর্ষদ স্থায়ী কমিটিতে আলোচনা হয়। তারা এ সাক্ষাৎকে দেশ ও জাতির ভবিষ্যতের জন্য হিতকর হবে বলে মনে করেন।

এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, প্রধান উপদেষ্টা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান। তিনি একজন আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব। দেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ১৭ বছর ধরে যুক্তরাজ্যে নির্বাসিত রয়েছেন। আমরা মনে করি, সরকারের প্রধান ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সাক্ষাৎটা হওয়া উচিত। এটা রাজনৈতিক শিষ্টাচারেরও অংশ। এ সাক্ষাৎ না হলে নিন্দুকেরা বিরূপ সমালোচনার সুযোগ নিতে পারত।

লন্ডনে অনুষ্ঠেয় এই সাক্ষাৎ নিয়ে দেশের অন্যান্য রাজনৈতিক দলের মধ্যেও কৌতূহল সৃষ্টি হয়েছে। এ বিষয়ে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, এটাকে (সাক্ষাৎ) আমরা ইতিবাচকভাবে দেখছি। কারণ, ইন্টেরিম গভর্নমেন্টের প্রধানের সঙ্গে দেশের বৃহত্তর রাজনৈতিক দলের ফাংশনাল প্রধানের সাক্ষাৎ হচ্ছে। আমরা আশা করি, আগামী জাতীয় নির্বাচন ও সংস্কারের বিষয়ে তারা কথা বলবেন।

অবশ্য জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), ইসলামী আন্দোলনসহ আরও কয়েকটি দল প্রধান উপদেষ্টার ঘোষিত নির্বাচনের সম্ভাব্য সময়কে স্বাগত জানিয়েছে। তারা বলেছে, এতে জাতি আশ্বস্ত হয়েছে।

এর মধ্যে জামায়াত ও এনসিপি মনে করে, জুলাই ঘোষণাপত্র ও জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করার পর নির্বাচনের সময় ঘোষণা করা হলে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ হতো। জামায়াত আশা করে, সংস্কার, বিচার (আওয়ামী লীগের) ও নির্বাচন—এ তিনটি বিষয়ের ভিত্তিতে এবং ‘জুলাই সনদ’ প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশকে একটি সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হবে।

‘রাজপথে নয়, টেবিলে সমাধানের পরামর্শ’

আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবিতে দৃঢ় অবস্থান নিয়ে এ লক্ষ্যে আগামী জুলাই থেকে মাঠের কর্মসূচিরও পরিকল্পনা করছিল বিএনপি। কিন্তু সে অবস্থান থেকে আপাতত কিছুটা সরে আসার ইঙ্গিত দিচ্ছেন নেতারা।

বিএনপির দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র জানায়, এ ক্ষেত্রে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ভূমিকা রাখেন। খালেদা জিয়াকে ঈদের শুভেচ্ছা জানাতে ৭ জুন রাতে তার বাসভবনে যান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। তখন তিনি জ্যেষ্ঠ নেতাদের কাছে জানতে চান, অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে এত দূরত্ব তৈরি করা হলো কেন। তিনি নেতাদের উদ্দেশে বলেন, এই সময়ে কোনো বিষয় নিয়ে রাজপথে যাওয়া ঠিক হবে না। যত সমস্যাই থাকুক, আলোচনায় বসে সমাধান করতে হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, স্থায়ী কমিটির নেতাদের এ সাক্ষাতের পরদিন রোববার খালেদা জিয়া তার বড় ছেলে ও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে কথা বলেন। এরপরই সোমবার রাতে স্থায়ী কমিটির সভা হয়। এই সভা থেকে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সৌজন্য সাক্ষাৎকে স্বাগত জানানো হয়। বিএনপির নেতারা মনে করেন, এই সাক্ষাৎ বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক সংকট কাটাতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে এবং একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পথ প্রস্তুত করতে সহায়ক হতে পারে।

এ বিষয়ে গতকাল দুপুরে বিভিন্ন গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিকভাবে কথা বলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি লন্ডনে অনুষ্ঠেয় সাক্ষাৎকে ‘এ সময়ের মধ্যে সবচেয়ে ইম্পরটেন্ট ইভেন্ট’ বলে মন্তব্য করেন।

আপন দেশ/এমবি

মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়