
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশি পণ্যে আরোপ করা পাল্টা শুল্কের হার কমানো নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির (ইউএসটিআর) সঙ্গে বাংলাদেশ দলের তৃতীয় দফা আলোচনা শুরু হয়েছে। প্রথম দিনের আলোচনা শেষে অগ্রগতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন।
বুধবার (৩০ জুলাই) সকালে তিনি বলেন, প্রথম দিনের আলোচনা শেষ হলো। এ ধরনের ক্ষেত্রে এত ত্বরিত ফল আসে না। তবে যেসব বিষয় ও শর্ত ছিল, এইটুকু বলতে পারি যে, সেগুলো নিষ্পত্তির বিষয়ে আমরা অগ্রসর হচ্ছি।
জানা গেছে, মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) ওয়াশিংটন ডিসিতে স্থানীয় সময় দুপুর সাড়ে ১২টায় দেশটির বাণিজ্য প্রতিনিধির (ইউএসটিআর) দফতরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে এ আলোচনা শুরু হয়। স্থানীয় সময় বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত (বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ৩টা) প্রথম দিনের আলোচনা হয়। তিন দিনব্যাপী এ আলোচনা ৩১ জুলাই শেষ হবে বলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে।
আগের দুই দফা বৈঠকে যেসব অমীমাংসিত বিষয় ছিল, সেগুলোতে একমত হয়েছে উভয় দেশ। কোন দেশকে যুক্তরাষ্ট্র কী সুবিধা দিয়েছে, আলোচনায় তা উত্থাপন করেছে বাংলাদেশ। চূড়ান্ত ফয়সালা শেষ দিনই হবে।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং মঙ্গলবার রাতে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে এ পর্যন্ত আলোচনায় যে অগ্রগতি হয়েছে, তার ভিত্তিতে বাংলাদেশ এ দফার আলোচনায় ইতিবাচক ফলাফল আশা করছে।
এদিকে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে কেনাকাটা বাড়াতে প্যাকেজ প্রস্তাব দেবে বাংলাদেশ। অর্থ উপদেষ্টার কাছে প্রশ্ন ছিল– বাংলাদেশ বিমানের জন্য বোয়িংয়ের কাছ থেকে ২৫টি উড়োজাহাজ কেনার পাশাপাশি সামরিক বিমান বা অন্য কোনো কেনাকাটার উদ্যোগ আছে কিনা– এর উত্তরে তিনি বলেন, আরও আছে। কী কী কিনব সে প্যাকেজ বাণিজ্য উপদেষ্টা নিয়ে গেছেন। অর্থ উপদেষ্টা এর বেশি কিছু না বলে বাণিজ্য উপদেষ্টা ফিরলে তাকেই জিজ্ঞাসা করতে সাংবাদিকদের পরামর্শ দেন।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ওয়াশিংটনে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির (ইউএসটিআর) কার্যালয়ের সঙ্গে আলোচনায় বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। আরও রয়েছেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান, বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নাজনীন কাউসার চৌধুরী। বৈঠকে ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাসের শীর্ষ কর্মকর্তারাও উপস্থিত থাকবেন। সরকারি প্রতিনিধি দলের পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের একটি দল যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন কোম্পানির সঙ্গে আলাদা বৈঠক করবে। এসব বৈঠকে পণ্য আমদানির সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই করতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের পণ্যে ৩৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা রয়েছে, যা আগামী ১ আগস্ট কার্যকর হওয়ার কথা। বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে পণ্য আমদানি বাড়ানো এবং তাদের পণ্যে শুল্ক কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে পাল্টা শুল্ক কমানোর চেষ্টা করছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন শুল্কনীতির আগে দেশটিতে বাংলাদেশের পণ্যে বর্তমানে গড়ে সাড়ে ১৫ শতাংশ শুল্ক ছিল। বর্তমানে যা ২২ থেকে ২৩ শতাংশ।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২ এপ্রিল বাংলাদেশসহ ৬০টি দেশের জন্য পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন। তবে ৯ এপ্রিল ট্রাম্প প্রশাসন সবার জন্য ১০ শতাংশ বাড়তি শুল্ক রেখে সব দেশের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপ তিন মাসের জন্য স্থগিত করে। স্থগিতাদেশের সময় শেষ হওয়ার আগেই ৮ জুলাই ট্রাম্প নতুন করে ঘোষণা দিয়ে জানান, বাংলাদেশের জন্য পাল্টা শুল্ক হার হবে ৩৫ শতাংশ। দেশভিত্তিক পাল্টা শুল্ক কার্যকরের পর সবার জন্য বাড়তি ১০ শতাংশ তার সঙ্গে সমন্বয় হবে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, যতদূর আভাস পাওয়া গেছে, যুক্তরাষ্ট্র আগের মতো শক্ত অবস্থানে নেই। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে শুল্ক হার ১৫ থেকে ২০ শতাংশের মধ্যে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। উল্লেখ্য, ভিয়েতনাম ২০ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইন ১৯ শতাংশ, জাপান ১৫ শতাংশ, যুক্তরাজ্য ১০ শতাংশ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ১৫ শতাংশ শুল্ক হারে সমঝোতা করতে পেরেছে।
আপন দেশ/জেডআই
মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।