Apan Desh | আপন দেশ

ঘুমের ব্যাঘাত ঘটছে, থাইরয়েডের সমস্যায় ভুগছেন কি?   

আপন দেশ ডেস্ক

প্রকাশিত: ২০:৪৩, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ঘুমের ব্যাঘাত ঘটছে, থাইরয়েডের সমস্যায় ভুগছেন কি?   

সংগৃহীত ছবি

আমাদের শরীরের স্বাভাবিক ছন্দকে নিয়ন্ত্রণ করে ঘুম। অন্যদিকে আবার শরীরের নানা কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে ছোট্ট একটি গ্রন্থি থাইরয়েড। কিন্তু এ থাইরয়েড হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হলে শুধু শরীর নয়, ঘুমেরও সমস্যা হতে পারে। কারও ঘুম আসতে দেরি হয়, কারও আবার রাতভর অস্থিরতা। কেউ ঘামতে থাকেন, কেউ ঠান্ডা সহ্য করতে পারেন না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, থাইরয়েড রোগীদের জন্য ঘুমের ব্যাঘাত একটি সাধারণ সমস্যা।

থাইরয়েডের সমস্যা: ঘাড়ের সামনের দিকে প্রজাপতির মতো আকৃতির থাইরয়েড গ্রন্থি তৈরি করে থাইরক্সিন ও ট্রাইআইডোথাইরোনিন নামক হরমোন। এগুলো শরীরের শক্তি ব্যবহার, শ্বাস-প্রশ্বাস, হৃৎস্পন্দন, হজম প্রক্রিয়া এমনকি শরীরের তাপমাত্রাও নিয়ন্ত্রণ করে। হরমোনের ঘাটতি বা আধিক্য দুটোই ক্ষতিকর।

হাইপোথাইরয়েডিজম বা থাইরয়েড কম কাজ করলে শরীরে পর্যাপ্ত হরমোন তৈরি হয় না। যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি ২০ জনে ১ জন এ রোগে আক্রান্ত। অন্যদিকে হাইপারথাইরয়েডিজম বা অতিরিক্ত সক্রিয় থাইরয়েডে বেশি হরমোন উৎপাদন হয়, যা প্রতি ১০০ জনে ১ জনকে প্রভাবিত করে। গ্রেভস ডিজিজ, হাশিমোটো ডিজিজের মতো অটোইমিউন রোগ, গর্ভাবস্থা কিংবা আয়োডিনের ঘাটতি–অতিরিক্ততা সবই থাইরয়েডের কার্যক্রমে প্রভাব ফেলে।

থাইরয়েড কি ঘুমের সমস্যা তৈরি করে: হাইপারথাইরয়েড রোগীরা সাধারণত অস্থিরতা, স্নায়বিক উত্তেজনা, ঘাম, ঘন ঘন প্রস্রাবের কারণে ঘুমাতে পারেন না। অন্যদিকে হাইপোথাইরয়েড রোগীদের ক্ষেত্রে ঠান্ডা সহ্য না হওয়া, সন্ধিব্যথা ও অবসাদ রাতের ঘুম নষ্ট করে। গবেষণা বলছে, এ অবস্থায় ঘুম আসতে দেরি হয়। ঘুমের সময়ও কমে যায়। অনেক ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ঘুমভাব বা হাইপারসোমনিয়ার ঝুঁকিও থাকে।

থাইরয়েড সমস্যায় রেস্টলেস লেগ সিনড্রোম বা অস্থির পায়ের সমস্যাও দেখা দেয়, যা ঘুমের শুরুতেই অস্বস্তি তৈরি করে। হাইপারথাইরয়েড কখনো কখনো নাইট টেররের মতো ঘুমের ব্যাধিও সৃষ্টি করতে পারে।

সমাধানের উপায়: থাইরয়েড রোগীদের জন্য ঘুমের পরিবেশ ঠিক করা খুব গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণভাবে ১৮–২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ঘরকে ঘুমের জন্য উপযোগী ধরা হয়। তবে যাদের হাইপারথাইরয়েড আছে তারা ঘামের কারণে ঠান্ডা পরিবেশে স্বস্তি পান, আর হাইপোথাইরয়েড রোগীদের উষ্ণ পরিবেশ দরকার হয়।

নিয়মিত ঘুমের অভ্যাস বজায় রাখা, ঘুমানোর আগে মোবাইল-টিভি এড়িয়ে চলা, হালকা গান বা স্ট্রেচিংয়ের মতো রিল্যাক্সিং কার্যক্রম ঘুমে সহায়তা করে। রাতের খাবারে ভারী খাবার না খেয়ে হালকা খাবার খাওয়াই ভালো। পাশাপাশি ক্যাফেইন ও অ্যালকোহল পরিহার করতে হবে।

থাইরয়েডের সমস্যা ধীরে ধীরে বাড়ে। তাই প্রথম দিকে অনেকেই টের পান না। হরমোনের মাত্রা বোঝার জন্য রক্তপরীক্ষা করা হয়। হাইপোথাইরয়েডিজমে লেভোথাইরক্সিন ওষুধ দেয়া হয়, আর হাইপারথাইরয়েডিজমে দেয়া হয় অ্যান্টি-থাইরয়েড ওষুধ। গর্ভবতী নারীদের জন্যও নিয়মিত পরীক্ষা জরুরি। ঘাড়ে অস্বাভাবিক ফোলাভাব, শ্বাসকষ্ট বা কণ্ঠস্বর কর্কশ হয়ে গেলে সতর্ক হতে হবে। এগুলো থাইরয়েড ক্যানসারের প্রাথমিক লক্ষণও হতে পারে মনে রাখতে হবে থাইরয়েড শুধু শরীর নয়, ঘুমকেও প্রভাবিত করে। তাই নিয়মিত পরীক্ষা, সঠিক ওষুধ গ্রহণ এবং স্বাস্থ্যকর ঘুমের অভ্যাস বজায় রাখলে থাইরয়েড সমস্যার মাঝেও প্রশান্ত ঘুম সম্ভব। সূত্র: স্লিপ ফাউন্ডেশন  

আপন দেশ/এমবি

সম্পর্কিত বিষয়:

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়