Apan Desh | আপন দেশ

জনসমক্ষে ভয়হীনভাবে কথা বলার কৌশল

আপন দেশ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৬:০১, ২৮ আগস্ট ২০২৫

জনসমক্ষে ভয়হীনভাবে কথা বলার কৌশল

ফাইল ছবি

অনেক মানুষের সামনে কথা বলতে গেলে আমাদের মধ্যে এক ধরনের উদ্বেগ কাজ করে। বুক ধড়ফড় করে, হাত-পা কাঁপে, এমনকি গলা শুকিয়ে কথা আটকে যায়। এ স্নায়ুচাপের কারণে আমরা অনেক সময় যা বলতে চাই, তা ভুলে যাই। কিন্তু এ ভয়কে জয় করা সম্ভব। এর জন্য কিছু সহজ কৌশল অবলম্বন করতে পারেন।

বিষয়বস্তু ভালোভাবে জানুন

আপনি যে বিষয়ে কথা বলতে যাচ্ছেন, সে সম্পর্কে আপনার পরিষ্কার ধারণা থাকা জরুরি। আপনি যত ভালোভাবে বিষয়টি বুঝবেন, আপনার আত্মবিশ্বাস তত বাড়বে। এতে যদি আপনি মাঝপথে কিছু ভুলে যান, তাহলেও দ্রুত মূল প্রসঙ্গে ফিরে আসতে পারবেন। শ্রোতাদের প্রশ্নের উত্তর দেয়াও আপনার জন্য সহজ হবে।

গোছানো থাকুন

উপস্থাপনার জন্য আগে থেকেই সবকিছু পরিকল্পনা করে রাখুন। কোন কথাটি কখন বলবেন, সেটির একটি রূপরেখা (outline) তৈরি করুন। ছোট একটি কাগজে মূল পয়েন্টগুলো লিখে রাখতে পারেন, যাতে প্রয়োজনে এক নজর দেখে নিতে পারেন। যদি কোনো ছবি, ভিডিও বা অন্য কোনো সরঞ্জাম ব্যবহারের প্রয়োজন হয়, তাহলে সেগুলো আগে থেকেই প্রস্তুত রাখুন। যত বেশি গোছানো থাকবেন, ততই আপনার স্নায়ুচাপ কমবে।

বারবার অনুশীলন করুন

অনুশীলনের কোনো বিকল্প নেই। আপনার উপস্থাপনাটি বারবার অনুশীলন করুন। প্রথমে আপনার কাছের বন্ধু বা পরিবারের সদস্যদের সামনে অনুশীলন করুন ও তাদের মতামত নিন। এরপর কয়েকজন অপরিচিত মানুষের সামনেও অনুশীলন করতে পারেন। এতে আপনার ভয় অনেকটাই কমে যাবে। চাইলে আপনার উপস্থাপনার ভিডিও রেকর্ড করে দেখতে পারেন, এতে কোথায় কোথায় আরও উন্নতি করা যায়, তা বুঝতে পারবেন।

দুশ্চিন্তাগুলোকে চিনুন

অনেক সময় আমাদের দুশ্চিন্তা বাস্তবের চেয়ে অনেক বড় মনে হয়। তাই আপনার দুশ্চিন্তার কারণগুলো চিহ্নিত করুন। কী কী ভুল হতে পারে বলে আপনি মনে করছেন, সেগুলো লিখে ফেলুন। এরপর ভাবুন, সত্যিই কি সেগুলো ঘটবে? বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যাবে, আপনার দুশ্চিন্তাগুলো অমূলক।

ইতিবাচক চিন্তা করুন

নেতিবাচক চিন্তা থেকে দূরে থাকুন। ভাবুন যে আপনার উপস্থাপনাটি অনেক ভালো হবে। মনে রাখবেন, ইতিবাচক চিন্তা আপনার উদ্বেগ কমাতে সাহায্য করে। আপনার আত্মবিশ্বাস যত বাড়বে, ততই আপনার পারফরম্যান্স ভালো হবে।

গভীর শ্বাস নিন

মঞ্চে ওঠার আগে ও কথা বলার সময় গভীরভাবে শ্বাস নিন। এটি মনকে শান্ত রাখতে সাহায্য করে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে উপস্থাপনার প্রথম কয়েক মিনিটেই সবচেয়ে বেশি নার্ভাস লাগে, এরপর ধীরে ধীরে তা কমে আসে।

শ্রোতার দিকে মনোযোগ দেবেন না

মানুষ সাধারণত বক্তার নার্ভাসনেস নয়, বরং নতুন তথ্যের দিকে বেশি মনোযোগ দেয়। তাই শ্রোতাদের দিকে অতিরিক্ত মনোযোগ না দিয়ে নিজের বিষয়বস্তুর দিকে মনোনিবেশ করুন। আপনার যদি মনে হয় শ্রোতারা আপনার ভয় বুঝতে পারছেন, তাহলেও চিন্তা করবেন না। বেশিরভাগ সময় শ্রোতারা বক্তাকে উৎসাহই দেন।

নীরবতাকে ভয় পাবেন না

যদি কথা বলতে বলতে হঠাৎ কিছু ভুলে যান, তাহলে ভয় পাবেন না। এ নীরবতা আপনার কাছে অনেক দীর্ঘ মনে হলেও আসলে তা মাত্র কয়েক সেকেন্ডের ব্যাপার। শ্রোতারা ভাববেন আপনি কথাটি নিয়ে ভাবছেন। শান্তভাবে গভীর শ্বাস নিন, নিজের কথায় ফিরে আসুন।

নিজের সাফল্য উদ্‌যাপন করুন

উপস্থাপনা শেষ হওয়ার পর নিজেকে অভিনন্দন জানান। আপনার বক্তৃতা যদি নিখুঁত নাও হয়, তবুও কোনো সমস্যা নেই। নিজের ভুলের জন্য অতিরিক্ত কঠোর হবেন না। প্রতিটি অভিজ্ঞতা থেকে শিখুন ও ভবিষ্যতে আরও ভালো করার চেষ্টা করুন।

প্রয়োজনে পেশাদারের সাহায্য নিন

যদি আপনার এ ভয় কোনোভাবেই না কমে, তাহলে একজন পেশাদারের সাহায্য নিতে পারেন। কগনিটিভ বিহেভিওরাল থেরাপি (CBT) একটি কার্যকর পদ্ধতি, যা এ ধরনের ভয় কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করে। এছাড়া, জনসমক্ষে কথা বলার প্রশিক্ষণ দেয় এমন কোনো গ্রুপে যোগ দিতে পারেন। যেমন, টোস্টমাস্টারস ইন্টারন্যাশনাল এমন একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান যা এই বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়।

যদি আপনার উদ্বেগ শুধুমাত্র জনসমক্ষে কথা বলার মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে অন্যান্য সামাজিক পরিস্থিতিতেও প্রভাব ফেলে, তাহলে এটি 'সোশ্যাল অ্যাংজাইটি ডিসঅর্ডার' হতে পারে। সেক্ষেত্রে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত।

আপন দেশ/এমবি

সম্পর্কিত বিষয়:

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়