
ছবি: সংগৃহীত
পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনী ভারতের আঞ্চলিক আধিপত্যের দম্ভ চূর্ণ করে দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ। সিয়ালকোটের কাছের পাশরুর ক্যান্টনমেন্টে ফ্রন্টলাইনে মোতায়েন সেনাদের উদ্দেশে দেয়া ভাষণ তিনি এ মন্তব্য করেন। বুধবার (১৪ মে) রাতে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য ডন-এর এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানায়।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বলেন, “অপারেশন বুনিয়ান-উম-মারসুস”-কে একটি ঐতিহাসিক সাফল্য হিসেবে আখ্যা দিয়ে বলেছেন, এই অভিযানের মধ্য দিয়ে পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনী ১৯৭১ সালের যুদ্ধে ভারতের ভূমিকার উপযুক্ত জবাব দিয়েছে। তিনি বলেন, ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে দৃঢ় ও শক্তিশালী প্রতিরোধ গড়ে তোলা হয়েছে।
শেহবাজ শরিফ বলেন, ইতিহাস চিরদিন স্মরণ রাখবে কীভাবে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পাকিস্তানের বীর সেনারা ভারতের বিনা উসকানির আগ্রাসনকে অদ্বিতীয় কৌশল ও অটল সংকল্পে দমন করেছে।
প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে ছিলেন উপপ্রধানমন্ত্রী ইসহাক দার, প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ, পরিকল্পনা ও উন্নয়নমন্ত্রী আহসান ইকবাল এবং তথ্যমন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার।
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর (আইএসপিআর) জানিয়েছে, এ সফরে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল সৈয়দ আসিম মুনির এবং বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল জহির আহমেদ বাবর সিদ্দিকিও উপস্থিত ছিলেন।
সফরকালে প্রধানমন্ত্রীকে সাম্প্রতিক সামরিক অভিযানের কৌশল, অগ্রগতি এবং সংশ্লিষ্ট কোরের বর্তমান প্রস্তুতি সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ ব্রিফিং দেয়া হয়।
সেনাদের উদ্দেশে ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির অটল সহায়তা ও দৃঢ় সংকল্পে বলীয়ান হয়ে পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনী মাতৃভূমির রক্ষায় বীরোচিত ভূমিকা রেখেছে এবং শত্রুর কাপুরুষোচিত আগ্রাসনের জবাবে নির্দয় প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে।
তিনি বলেন, এ সামরিক সাফল্য নিয়ে ভবিষ্যতে গ্রন্থ রচিত হবে—যা সশস্ত্র বাহিনীর সাহস, দক্ষতা এবং পেশাদারিত্বের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
শেহবাজ শরিফ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর নেতৃত্ব এবং সদস্যদের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, ‘তারা পাকিস্তানের শত্রুদের তাদের যথোচিত জায়গায় ফিরিয়ে দিয়েছেন।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে সরাসরি উদ্দেশ করে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭১ সালে কে মুক্তিবাহিনীকে প্রশিক্ষণ দিয়েছিল, তা ইতিহাস জানে। আজ একই ষড়যন্ত্র বিএলএ ও টিটিপির মতো গোষ্ঠীগুলোর পেছনেও দেখা যাচ্ছে—এবং তার উৎস মোদি নিজেই।
মোদি সরকারের সাম্প্রতিক বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মোদি সাহেব, আপনার উসকানিমূলক বক্তব্য নিজের কাছেই রাখুন। পাকিস্তান এ অঞ্চলে শান্তি চায়, তবে আমাদের স্থিতিশীলতার আকাঙ্ক্ষাকে কখনোই দুর্বলতা ভাববেন না।
সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তি স্থগিতের প্রসঙ্গ টেনে তিনি ভারতকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ভারত যদি পাকিস্তানের পানির প্রবাহ বন্ধের চিন্তা করে, তবে জেনে রাখা উচিত—রক্ত ও পানি একসঙ্গে প্রবাহিত হতে পারে না। এটি এমন একটি সীমারেখা, যেখানে কোনো আপস সম্ভব নয়।
তিনি আরও বলেন, পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনী ভারতের আঞ্চলিক আধিপত্যের ভ্রান্ত ধারণা চূর্ণ করে দিয়েছে। যারা নিজেদের অঞ্চলশক্তি মনে করত, তাদের সে বিভ্রমও এবার ভেঙে গেছে।
কাশ্মীরসহ সব অনিষ্পন্ন ইস্যু নিয়ে সংলাপের জন্য পাকিস্তান প্রস্তুত বলে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা একতরফা দৃষ্টিভঙ্গি মেনে নেব না, যেখানে শুধু সুখকর বক্তব্য গ্রহণযোগ্য আর কঠোর সত্য এড়িয়ে চলা হয়।
তিনি মোদিকে আবার সতর্ক করে বলেন, ভবিষ্যতে যদি আপনি আরেকটি আগ্রাসনের চেষ্টা করেন, তবে এমন প্রতিক্রিয়া পাবেন যা কল্পনাকেও হার মানাবে।
ফ্রন্টলাইনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময়ে প্রধানমন্ত্রী তাদের উঁচু মনোবল, দায়িত্ববোধ ও প্রস্তুতির প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, পাকিস্তান তার সাহসী সন্তানদের নিয়ে গর্ব করে। তারা জাতির গৌরব। শিশু, নারী ও বৃদ্ধদের ওপর বর্বর হামলা চালিয়ে তাদের শহীদ করে সন্ত্রাসী বলে অভিহিত করা আন্তর্জাতিক আইন, নীতিমালা ও নৈতিকতার পরিপন্থী ও অত্যন্ত লজ্জাজনক।
তিনি আরও জানান, পাকিস্তান নিরপেক্ষ তদন্তের প্রস্তাব দিলেও ভারত তা ইচ্ছাকৃতভাবে এড়িয়ে গেছে। কারণ তাদের হাতে প্রমাণ ছিল না। তারা কেবল অহংকার ও মিথ্যা অজুহাতে আগ্রাসন চালিয়েছে এবং এর উপযুক্ত জবাবও পেয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, শহীদেরা জাতির গর্ব, এবং জাতি তাদের প্রতি চিরকাল ঋণী থাকবে।
উল্লেখ্য, পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনী সম্প্রতি “অপারেশন বুনিয়ান-উম-মারসুস” নামে একটি ব্যাপক সামরিক অভিযান শুরু করে। এ অভিযানে একাধিক অঞ্চলে ভারতের সামরিক স্থাপনাগুলোকে লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়।
পাকিস্তানি কর্মকর্তারা এসব হামলাকে “নিখুঁত ও যথাযথ প্রতিক্রিয়া” বলে উল্লেখ করেন। ভারতের ধারাবাহিক আগ্রাসন—যা এলওসি ও পাকিস্তানের ভেতরে চালানো হয়েছিল—এর জবাবেই এ অভিযান চালানো হয়। ভারত দাবি করেছিল, তারা তথাকথিত সন্ত্রাসবাদী লক্ষ্যবস্তুতে হামলা করছে।
দুই পরমাণু শক্তিধর দেশের মধ্যে এ সংঘাত টানা ৮৭ ঘণ্টা স্থায়ী হয়। পরে ১০ মে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় উভয় পক্ষ যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়।
আইএসপিআরের তথ্য অনুযায়ী, সাম্প্রতিক এ সংঘাতে ভারতীয় হামলায় মোট ৫৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ১৩ জন ছিলেন সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য এবং ৪০ জন ছিলেন সাধারণ বেসামরিক নাগরিক।
এ সামরিক উত্তেজনার সূচনা হয় গত মাসে ভারত অধিকৃত জম্মু ও কাশ্মীরে এক হামলায়, যেখানে ২৬ জন পর্যটক নিহত হন। ভারত কোনো ধরনের প্রমাণ ছাড়াই এ হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে।
পাকিস্তান এ অভিযোগ দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করে এবং নিরপেক্ষ তদন্তের আহবান জানায়। ইসলামাবাদ জানায়, ভারত যেসব স্থানে হামলা চালিয়েছে, সেগুলো ছিল বেসামরিক এলাকা। খবর: জিও নিউজ
আপন দেশ/জেডআই
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।