Apan Desh | আপন দেশ

১ জুলাই স্বৈরশাসনের পতনের সূচনাবিন্দু

নিজস্ব প্রতিবদেক

প্রকাশিত: ০৯:৫৬, ১ জুলাই ২০২৫

আপডেট: ১০:০৪, ১ জুলাই ২০২৫

১ জুলাই স্বৈরশাসনের পতনের সূচনাবিন্দু

ফাইল ছবি

আজ ১ জুলাই। স্বৈরশাসনের পতনের সূচনাবিন্দু। এ দিনটি আওয়ামী লীগ সরকারের সাড়ে ১৫ বছরের ফ্যাসিবাদী শাসনের পতনের সূচনাবিন্দু। গত বছরের এ দিনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে শুরু হয় সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলন। যা পরে ফ্যাসিবাদবিরোধী গণ-আন্দোলনে রূপ নেয়। 

৫ জুন বিচারপতি কেএম কামরুল কাদের ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটাসহ কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। সে রায়ের পরিপ্রেক্ষিতেই কোটা বিরোধী আন্দোলন শুরু হয়।

সে থেকেই আন্দোলন চলতে থাকে। ১ জুলাই শিক্ষার্থীদের ‘কোটা সংস্কার আন্দোলন’ ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে’ রূপ নেয়। এটি ছিল প্রায় ১৬ বছরের আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের সূচনাবিন্দু। তারপর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি, রোকেয়া হল, শাহবাগ ও মলচত্বরে জড়ো হতে থাকেন আন্দোলনকারী ছাত্ররা। সন্ধ্যায় বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। এ  বিক্ষোভ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি সারাদেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও আন্দোলন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর, রাজশাহী ও বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ ক্যাম্পাসে অবস্থান কর্মসূচি, মিছিল ও সমাবেশ শুরু করেন।

সরকার আন্দোলনকে দমন করতে সহিংস পথ বেছে নেয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি ছাত্রলীগ ও ক্ষমতাসীন দলের অন্যান্য অঙ্গসংগঠনকে আন্দোলন দমনের কাজে লাগানো হয়। রাস্তায়, ক্যাম্পাসে, এমনকি হাসপাতালের ভেতরেও চলে হামলা। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভেতরে আহত বিক্ষোভকারীদের উপরও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হামলা চালায়। সরকার ও তার সহযোগী বাহিনীর হাতে তিন সপ্তাহে কয়েকশ নিরস্ত্র নাগরিক প্রাণ হারান। আহত হন হাজারো শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ। গ্রেফতার ও গুমের শিকার হন বহু।

খুন, গুম-জুলুমে বিক্ষুব্ধ ক্ষতবিক্ষত রক্তাক্ত বাংলাদেশ। স্বৈরাচারের নাগপাশে বালসে গেছে শত শত প্রতিবাদের মুখ। হাজার হাজার মানুষ বন্দি কারাগারে। বাড়ছে গোপন বন্দিশালা আয়নাঘর। চারদিকে বাড়ছে মরদেহের সারি। সাধুবেশে শয়তানরা দিচ্ছে হাঁক। মরে মরুক সব, জঙ্গি-সন্ত্রাস। 'আপা' আপনি থাকছেন। বুকফাটা আর্তনাদ, কান্না যেন থামছেই না। মুক্তিকামী মানুষের আহাজারি আকাশে-বাতাসে। জেল, জুলুম আর মৃত্যুতে আক্রান্ত হয় গোটা দেশ।রাজপথে তখন অপ্রতিরোধ্য ‘আবাবিল’ বেশে নেমে আসা ছাত্র-জনতা। উত্তাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শাহবাগ। এবার বিপ্লবীরা জীবন দেবে। তাই টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া জেগে উঠল অন্য এক বাংলাদেশ। এ আগুন আর থামেনি—জেগে ওঠে অন্য এক বাংলাদেশ।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ব্যর্থ হয়ে সরকার আরও দমননীতি অবলম্বন করে। কিন্তু প্রতিদিন বাড়তে থাকে মানুষের অংশগ্রহণ।

একের পর এক থানা, জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ঘেরাও করে বিক্ষোভকারীরা। কোথাও কোথাও সংঘর্ষ হয়। এক মাসের মাথায়, সরকার পতনের দাবি হয়ে ওঠে আন্দোলনের একমাত্র লক্ষ। 

দীর্ঘ ১৬ বছর ক্ষমতা থাকা দল আওয়ামী লীগ ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে ক্ষমতাচ্যুত হয় ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট। দলের সভাপতি সেদিন ভারতে পালিয়ে যান। তার দলের নেতাকর্মীরা আত্মাগোপনে চলে যান। আওয়ামী লীগ ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হলেও সে আন্দোলনের বীজ রোপন করা হয় ১ জুলাই।

daily apandesh

অন্তর্বর্তী সরকারে কর্মসূচি

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বছরপূর্তি উপলক্ষ্যে ৩৬ দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে জুলাই শহীদদের স্মরণ, পোস্টারিং, ডকুমেন্টারি প্রদর্শন, গ্রাফিতি, সব জেলায় জুলাই স্মরণে স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপন, আলোচনা অনুষ্ঠান প্রভৃতি। ৫ আগস্ট মানিক মিয়া অ্যাভিনউ অভিমুখে বিজয় মিছিলসহ আরও কিছু আয়োজনের মাধ্যমে কর্মসূচি শেষ হবে। ১ জুলাই ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে শহীদদের স্মরণে দোয়া ও প্রার্থনা, খুনিদের বিচার দাবিতে গণস্বাক্ষর শুরু ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষাবৃত্তি চালু।

এনসিপির কর্মসূচি

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপির) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানকে স্মরণ করতে ১ থেকে ৩০ জুলাই দেশের সব জেলায় জুলাই পদযাত্রা হবে। এর নাম দেওয়া হয়েছে “দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা”। ১ জুলাই শহীদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারতের মাধ্যমে এই পদযাত্রা শুরু হবে। এ সময়ে আমরা শহীদ পরিবারদের কাছে যাব। তাদের কবর জিয়ারত করব। জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতারা একসঙ্গে এই পদযাত্রা করবে।’

daily apandesh

বিএনপির কর্মসূচি

জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি ব্যাপক পরিসরে পালন করবে বিএনপি। এ উপলক্ষ্যে ৩৬ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে দলটি। দল থেকে জানানো হয়- বিজয় মিছিল, মৌন মিছিল, ছাত্র সমাবেশ, আলোচনা সভা, সেমিনার, রক্তদান, গ্রাফিতি অংকন, পথনাটক, ফুটবল টুর্নামেন্ট, শিশু অধিকারবিষয়ক অনুষ্ঠান, ডেঙ্গু ও করোনা প্রতিরোধে জনসচেতনতামূলক কার্যক্রমসহ অন্তত ২২টি ভিন্নধর্মী আয়োজনের মাধ্যমে ‘জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান’ স্মরণ করবে বিএনপি। বিএনপি ঘোষিক কর্মসূচি হলো— ১ জুলাই বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে ‘গণঅভ্যুত্থান ২০২৪ : জাতীয় ঐক্য ও গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা’ শীর্ষক আলোচনা সভা ও শহীদ পরিবারের সম্মানে বিশেষ অনুষ্ঠান। এতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ভার্চুয়ালি যোগ দেবেন।

গণঅধিকার পরিষদ কর্মসূচি

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে মাসব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করেছে গণঅধিকার পরিষদ। ১ জুলাই : কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে রাষ্ট্র সংস্কার- (২০১৮-২০২৪) শীর্ষক আলোচনা সভা করবে।

শিবিরের কর্মসূচি

জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে ৩৬ দিনব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির। শিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম বলেন, জুলাইয়ের স্মৃতি ধারণ, গণহত্যার বিচার নিশ্চিতকরণ, জাতীয় ঐক্য সুসংহত করতে সততা ও দক্ষতায় প্রজন্ম গড়ার প্রতিজ্ঞায় ‘জুলাই জাগরণ নব উদ্যমে বিনির্মাণ’ এই প্রতিপাদ্য সামনে রেখে জুলাই অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে ৩৬ দিনব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করছি।

daily apandesh

শিবিরের ঘোষিত কর্মসূচি হলো—সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, রিসার্চ কনফারেন্স, আলোচনা সভা ও দোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন, শহীদদের কবর জিয়ারত, শহীদ পরিবার ও আহতদের সঙ্গে সাক্ষাৎ ও মতবিনিময়, শাখাভিত্তিক জুলাই গণহত্যার বিচারের দাবিতে ‘জুলাই দ্রোহ’ শিরোনামে বিক্ষোভ মিছিল আয়োজন, সারাদেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও গুরুত্বপূর্ণ পাবলিক প্লেসে ‘জুলাই জাগরণ নব উদ্যমে বিনির্মাণ’ শীর্ষক আলোকচিত্র ও ডকুমেন্টারি প্রদর্শনী এবং কালচারাল ফেস্ট আয়োজন, জুলাই গ্রাফিতি অংকন, জুলাইয়ের গল্প ও স্মৃতি বলা, স্মৃতিলিখন, বক্তব্য, রচনা, বিতর্ক, ক্রীড়া প্রতিযোগিতা প্রভৃতি আয়োজন, শহীদদের নামে লাইব্রেরি/পাঠাগার প্রতিষ্ঠা, শহীদ পরিবার, আহত ও আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী গাজীদের নিয়ে ‘ত্যাগীদের চোখে আগামীর বাংলাদেশ’ শীর্ষক সাক্ষাৎকার গ্রহণ ও পডকাস্টের আয়োজন, জুলাইয়ের ওপর সাহিত্য সাময়িকী ও বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ, জুলাই স্মৃতি লিখন প্রতিযোগিতার পুরস্কার প্রদান ও জুলাই প্রকাশনার মোড়ক উন্মোচন ও প্রদর্শনী এবং ৩৬ দিনব্যাপী অনলাইন ক্যাম্পেইন।

আপ বাংলাদেশ কর্মসূচি

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে ৩৬ দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশ (আপ বাংলাদেশ)। শহীদদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি, আহতদের সুচিকিৎসা নিশ্চিতকরণ, গুম খুনের বিচার, জুলাই ঘোষণাপত্রসহ বিভিন্ন দাবিতে ৩৬ দিন ধরেই নানাভাবে স্মরণ ও উদ্যাপন করার ঘোষণা দিয়েছে রাজনৈতিক এই প্ল্যাটফর্মটি। ঘোষিত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে ১ জুলাই থেকে ৩৬ জুলাই পর্যন্ত দেশব্যাপী গণসংযোগ।

আপন দেশ/এমবি

মন্তব্য করুন ।। খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত,আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়