ছবি: আপন দেশ
চার হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎকারী ফারইস্ট লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির সাবেক চেয়ারম্যান মো: নজরুল ইসলাম এবং পরিচালক এম.এ. খালেককে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে অধরা রয়ে গেছেন প্রতিষ্ঠানটির ২২ পরিচালক। তারা যেকোনো মুহূর্তে দেশ ত্যাগ করতে পারেন। কোম্পানি থেকে আত্মসাৎকৃত অর্থে গড়ে তোলা ব্যক্তিগত সম্পদ বিক্রি, হস্তান্তর, স্থানান্তর করে সেই অর্থ তারা কৌশলে বিদেশে সরিয়ে নিচ্ছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। অথচ এ আসামিদের গ্রেফতারে কোনো তৎপরতা নেই দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক)।
সংস্থাটির দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, গত ৩১ জুলাই ফারইস্ট লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির তৎকালিন চেয়ারম্যানসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। উপ-পরিচালক সৈয়দ আতাউল কবির বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেন। নজরুল ইসলাম ও এমএ খালেক ছাড়া অন্য আসামিরা হলেন- তৎকালিন পরিচালক মো: হেলাল মিয়া, শারিয়ার খালেদ, নাজনীন হোসেন, খন্দকার মোস্তাক মাহমুদ, মো: মনোয়ার হোসেন, কে এম খালেদ, ইফফাৎ জাহান, মো: মিজানুর রহমান, মোজাম্মেল হোসেন, রাবেয়া বেগম, মো: মোশাররফ হোসেন, কাজী ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, তৎকালিন ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো: হেমায়েত উল্লাহ, সৈয়দ আবদুল আজিজ, প্রকৌশলী আমির হোসেন, তাসলিমা ইসলাম, সাবিহা খালেক, সারওয়াৎ খালেদ সিমিন, মো: আজহার খান, মো: সোহেল খান, গোলাম কিবরিয়া ও এস এম মোর্শেদ।
আরও পড়ুন<<>> ন্যাশনাল লাইফের তদন্তে দুদক: ২১শ’ অ্যাকাউন্টে সন্দেহজনক লেনদেন, ৭১৮ কোটি টাকা আত্মসাৎ-পাচার
এজাহারের তথ্য মতে, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে রাজধানীর তোপখানা রোডের একটি জমি ও স্থাপনা অনিয়ম করে ২০৭ কোটি ৩৬ লাখ টাকায় কেনাবেচা করেন। অনুসন্ধানে উঠে আসে, এ লেনদেনের মাধ্যমে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানির ৪৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন সাবেক চেয়ারম্যান মো: নজরল ইসলাম, পরিচালক এম এ খালেক এবং তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। পরে এ অর্থ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের নামে বিভিন্ন ব্যাংকে স্থানান্তর করা হয়।
এ মামলায় গত শনিবার রাজধানী থেকে পুনরায় গ্রেফতার করা হয় প্রতিষ্ঠানটির তৎকালিন চেয়ারম্যান মো: নজরুল ইসলাম ও পরিচালক এমএ খালেককে। ইতোপূর্বে দুদকের আরেকটি মামলায় তাদের গ্রেফতার করা হলেও জামিনে বেরিয়ে আসেন। শনিবার তাদের গ্রেফতারের পর আদালতের হাজির করা হলে ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। রোববার (২৬ অক্টোবর) তাদের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
এদিকে নজরুল ইসলাম এবং এমএ খালেককে রিমান্ডে আনা হয়েছে-খবর পেয়ে ফারইস্টের শত শত এজেন্ট-গ্রাহক ও ক্ষতিগ্রস্তরা জড়ো হন রাজধানীর সেগুনবাগিচাস্থ দুদক কার্যালয়েল সামনে। তারা নজরুল ও খালেকের আত্মসাৎকৃত অর্থ ফেরত চান। তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। তারা মানববন্ধন করেন। পরে দুদক চেয়ারম্যান বরাবর একটি স্মারক লিপি পেশ করেন।
মানববন্ধনে অংশ নেয়া ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের গাজীপুর অফিসের ইনচার্জ এজিএম মো: মাকসুদুর রহমান এ প্রতিবেদককে বলেন, সাবেক চেয়ারম্যান ও তার সহযোগীরা কোম্পানি থেকে সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। আমি ফারইস্টে ১৮ বছর ধরে চাকরি করি। গ্রাহকের টাকা ম্যাচিউর্ড হয়েছে। কিন্তু দিতে পারছি না। সব টাকা সাবেক চেয়ারম্যান ও তার সহযোগীরা লুটপাট করে নিয়েছেন। গ্রাহকরা এখন আমাদেরকে অফিস-আদালত, বাড়ি-ঘর ও বাজার-বন্দর, এমনকি মসজিদসহ যেখানে পায়, সেখানেই টাকার জন্য ধরে। আমরা কোথাও গিয়ে বাঁচতে পারছি না।
চার বছর ধরে গ্রাহকদের টাকা দিতে পারছি না। তাদের পলিসির মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার পরও। আর আমরা যারা কোম্পানিতে চাকরিরত আছি, গত কয়েক বছর ধরে কোনো ধরনের বেতন পাচ্ছি না। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে অন্যতম বড় একটি বীমা কোম্পানি এটি। গত ২০১৯ সালে সরকারকে ১ হাজার ৯০০ কোটি টাকা ট্যাক্স দিয়েছি। তারপরও সরকার এখন আমাদের এই দুর্দশা দেখেও কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এ সময় তিনি দাবি জানিয়ে বলেন, কোম্পানি থেকে যে সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে, সেগুলো ফেরত দিতে হবে। এছাড়া এ ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িতদের বিচার করতে হবে। আমরা প্রায় ৫০০ থেকে ৬০০ কর্মী ভুক্তভোগী। এছাড়া অনেক কর্মীকে বিনা কারণে ছাঁটাই করা হয়েছে।
আরও পড়ুন<<>> ন্যাশনাল লাইফের সাড়ে চারশ’ কোটি টাকা মোরশেদের পেটে
ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্যুরেন্সের টঙ্গী জোনের জোনাল ইনচার্জ আখতার হোসেন বাবু বলেন, কোম্পানির অর্থ আত্মসাৎ করে তারা শিল্প-কারখানা থেকে শুরু করে বিভিন্ন সম্পত্তি করেছে। তারা দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন প্রজেক্টের নামে কোম্পানি থেকে টাকা সরিয়ে আত্মসাৎ করেছে। প্রায় তিন বছর ধরে আমরা কোনো বেতন পাচ্ছি না। যেসব গ্রাহক আছে, তাদের টাকাও দিতে পারছি না। ফলে নতুন করে গ্রাহকরা পলিসি গ্রহণ করছে না। এতে করে আমরা কমিশনও পাচ্ছি না। সব মিলিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছি। পরিবার নিয়ে চলতে পারছি না।
অভিযোগকারীরা বলেন, ২০০০ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত গ্রাহকদের অবদানে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের তহবিলে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা জমা হয়। কিন্তু সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম ও সাবেক পরিচালক এম এ খালেক কোম্পানিতে নিজেদের লোক বসিয়ে ‘ভুয়া খরচ, কাগুজে বিনিয়োগ ও ম্যানেজমেন্টের কারসাজির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করেন। সে অর্থের বড় একটি অংশ বিদেশে পাচার করা হয়েছে। এর ফলে প্রায় ৪০ লাখ গ্রাহক তাদের প্রাপ্য অর্থ না পেয়ে প্রতিদিন অফিসে গিয়ে হতাশা প্রকাশ করছেন।
আপন দেশ/এবি
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।




































