
ছবি : আপন দেশ
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) আবাসিক হলগুলোতে ঈদুল আজহা উপলক্ষে মাংস বিতরণ করেছিলো ইসলামী ছাত্রশিবির। ২০২২ সালের ১২ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও কর্মচারীদেরকে চিঠিসহ বিতরণকালে সে মাংস জব্দ করে ফ্রিজিং করে রেখে দেয় বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রশাসন।
কিন্তু রাবি শাখা ছাত্র শিবিরের দেয়া সে মাংসের হদিস মেলেনি আজও। এ বিষয়ে তৎকালীন রাবি শিবির সেক্রেটারি আব্দুর রহিম তার নিজ ফেইসবুক আইডিতে পোস্ট দেন।
ফেইসবুক পোস্টে তিনি বলেন, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঐতিহ্য হলো প্রতিবছর স্থানীয় শহীদ পরিবার, জনশক্তি, গরিব শিক্ষার্থী ও অসহায় পরিবারগুলো নিয়ে একসঙ্গে ঈদ উদযাপন করা। সে ধারাবাহিতায় ২০২২ সালের ১০ জুলাই পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের পক্ষ থেকে গোশত উপহার দেয়ার সকল পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। বিভিন্ন ভাইদের আন্তরিকতায় ও আল্লাহর রহমতে আমরা ৬টি গরু ও ২১টি খাসি কুরবানি করতে সক্ষম হয়েছিলাম।
আমাদের সবচেয়ে কষ্ট হচ্ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে অবস্থানরত ২২৬ জন শিক্ষার্থী ভাই-বোনদের কথা ভেবে। তাদের কাছে আমরা কীভাবে গোশত পৌঁছাব? প্রশাসনের কঠোর নজরদারির কারণে বিগত বছরগুলোতে গোপনে কিছু পরিবার এবং শিক্ষার্থীর নিকট পৌঁছানো হতো। কিন্তু হলের সকল ভাই-বোনের কাছে প্রশান্তির সঙ্গে গোশত পৌঁছাতে পারিনি।
আমাদের সাংগঠনিক ঐতিহ্য অনুযায়ী, সভাপতি অথবা সেক্রেটারি দুইজনের যেকোনো একজন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ঈদ করেন। ঈদের পরে শহীদ পরিবার, জনশক্তি ও অন্যান্য স্থানীয় পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সাবেক ভাইদের সঙ্গে ঈদ উপভোগ করেন।
আজিজুর রহমান আজাদ ভাই (বর্তমানে কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক) তখন বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতি। তিনি ঈদুল ফিতর রাজশাহীতে করেছিলেন। সে ধারাবাহিকতায় ঈদুল আজহার দায়িত্ব পড়ে আমার কাঁধে। বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন অফিস সম্পাদক আব্দুল মোহাইমিন ভাই এবং আমি, কয়েকজন ভাইকে সঙ্গে নিয়ে রাজশাহীতে ঈদ করি।
কুরবানির একপর্যায়ে গোশত বণ্টনের সময় আমরা চিন্তা করছিলাম আমাদের হলের ভাই-বোনদের কাছে কীভাবে এ গোশত পৌঁছাব? বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতি ভাইকে জানালাম ক্যাম্পাসের সার্বিক পরিস্থিতি। কিছুক্ষণ পর ভাই জানালেন, কুরবানি তো আজ শেষ, রাত হয়ে গেছে। নিরাপাত্তাসহ সার্বিক বিষয় চিন্তা করে আগামীকাল সকালে হলে গোশত পৌঁছানো যেতে পারে, তাহলে সবাই একসাথে আনন্দের সাথে দুপুরে খেতে পারবেন।
যেহেতু দীর্ঘদিন পর এইভাবে গোশত উপহার দিতে যাচ্ছি, তাই বিভিন্ন দিক বিবেচনায় নিয়ে গোপন মাধ্যমে খবর নেই। জানতে পারি আমরা যেন কোনো কার্যক্রম করতে না পারি, সেজন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে স্থানীয় ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা অবস্থান করছে। সেজন্য খুব সতর্কতার সঙ্গে আমরা সিদ্ধান্ত নেই ছাত্রদের আবাসিক হলগুলোতে আগামীকাল সকালেই গোশত পৌঁছাব, পরবর্তীতে আল্লাহ সুযোগ দিলে তখন বোনদের কাছেও পৌঁছাব।
পূর্বপ্রস্তুতি অনুযায়ী বিনোদপুর বাজার মসজিদ থেকে আমরা নফল নামাজ আদায় করে, আল্লাহর কাছে সাহায্য চেয়ে ক্যাম্পাসের উদ্দেশ্যে রওনা হই। যেহেতু বেশি সংখ্যক লোক ক্যাম্পাসে ঢুকলে প্রশাসনের চোখে পড়বে, সেসময় রাবির হলের সকল গেটে পুলিশ থাকতো, গোয়েন্দাদেরও ব্যাপক তৎপরতা থাকত, ছাত্রলীগ সভাপতি-সেক্রেটারি ২ জনেরও পাশে বাড়ি, তাই আমরা ছোট ছোট গ্রুপে ভাগ হয়ে হলে যাই। আর কয়েকজন ক্যাম্পাসের বাইরে অবস্থান করি। আমাদের গোশত পৌঁছানোর কিছুক্ষণ পর জানতে পারলাম, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে গোশতগুলো জব্দ করা হয়েছে। এ বিষয়ে প্রাধ্যক্ষ পরিষদ ঈদের আনন্দ বাদ দিয়ে জরুরি বৈঠকে বসেছে।
তখন খুব খারাপ লেগেছিল। যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোটি কোটি টাকা বিভিন্ন খাতে ব্যয় করে, আত্মসাৎ করে, তারা তাদের ২২৬ জন শিক্ষার্থীর জন্য কোনো আয়োজন করার প্রয়োজনবোধ করেনি। অথচ আমরা সামান্য একটু চেষ্টা করলাম, সেই চেষ্টাটুকুও তারা সফল হতে দিলো না। বরং তারা গোশতগুলো শিক্ষার্থীদের মুখের সামনে থেকে ছিনিয়ে নিলো।
কিছুক্ষণ পর বিভিন্ন মাধ্যমে থেকে ছবি আসতে থাকল, কারা কোন গেট দিয়ে গোশত বিতরণ করতে প্রবেশ করেছিল, কোন গেট দিয়ে বের হয়েছিল। সিসি ক্যামেরা দেখে দেখে প্রশাসন তাদের শনাক্ত করে গ্রেফতারের অভিযান শুরু করে। শুনলাম গোশতের ফরেনসিক টেস্ট করা হবে, তদন্ত করা হবে! সেজন্য মতিহার থানায় আমাদের নামে জিডিও করল। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো আমাদের উপহার দেয়া সে গোশতের আজও সন্ধান মেলেনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মাঈন উদ্দিন বলেন, এটি প্রায় তিনবছর আগে ২০২২ সালের ঘটনা, আমরা দায়িত্বে আসার পরে সেটির কোনো হদিস পাইনি। খোঁজ খবর নিলে হয়তো তথ্য পাওয়া যাবে। কিছু পুরাতন কর্মচারী আছে, তাদের থেকে তথ্য জানা যেতে পারে।
যদি ছাত্রশিবির আবার এমন উদ্যোগ নেয় তাহলে বর্তমান প্রশাসন বিষয়টি কিভাবে নিবে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের বর্তমান প্রশাসন যেকোনো ভালো কাজকে উৎসাহ দেয়। সেটা যেকোনো সংগঠন হোক। রাজনৈতিক, সামাজিক বা জেলা সমিতির ছাত্রদের কল্যাণমূলক বিভিন্ন কাজকে আমাদের প্রশাসন উৎসাহ দিয়ে থাকে। কোনো সংগঠন যদি দাতব্য বা ভালো কাজ করে তাহলে আমাদের পক্ষ থেকে কোনো বাঁধা নেই বরং স্বাগত জানাই।
আপন দেশ/জেডআই
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।