ছবি : আপন দেশ
গত কয়েক মাস আগে থেকেই ঊর্ধ্বমুখী কাঁচাবাজার। বাড়তে বাড়তে নাগালের বাইরে চলে গিয়েছিল বেগুন, কাঁচামরিচসহ অন্যান্য সবজির দাম। দাম বাড়ার প্রতিযোগিতায় নাম লিখিয়েছিল ডিম আর সয়াবিন তেল। সেটি সামান্য কমলেও তো স্বস্তিদায়ক নয়। ফলে এখনও বাজার করতে গিয়ে নাভিশ্বাস উঠেছে স্বল্প আয়ের মানুষদের।
কার্তিক মাসে সাধারণত বাজারে শীতের আগাম কিছু সবজি আসে। ফলে অন্যান্য সবজির দাম কমতির দিকে থাকে। তবে এ বছর শীতের আগাম সবজি এখনো সেভাবে বাজারে আসেনি। শীতের সবজি বাজারে আসতে এখনো ২০–৩০ দিন সময় লাগতে পারে। ফলে আগামী দু–তিন সপ্তাহে সবজির দাম কমার কোনো ইঙ্গিত দেখা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা।
সাপাতাহিক ছটির দিন শুক্রবার (২৪ অক্টোবর) রাজধানীর বাজার ঘুরে এবং বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
এদিন রাজধানীর কমলাপুর কাঁচাবাজারে গিয়ে দেখা গেছে, বর্তমানে বেশির ভাগ সবজি প্রতি কেজি ৬০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কোনো কোনো সবজির দাম আরও বেশি। বিক্রেতারা বলছেন, তিন মাসের বেশি সময় ধরে চড়া দামে সবজি বিক্রি হচ্ছে। শীতের সবজির সরবরাহ শুরু হলে দাম কমতে পারে।
শুক্রবার বাজারে প্রতি কেজি বেগুন বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১৬০ টাকায়। পাড়া–মহল্লায় দাম আরও কিছুটা বেশি। টমেটোর দামও বেশি। ভারত থেকে আমদানি করা প্রতি কেজি টমেটো ১২০ থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। করলা, কাঁকরোল, বরবটি, ঢ্যাঁড়স, লতি প্রভৃতি সবজি ৮০ থেকে ১০০ টাকার মধ্যে এবং পটোল, ঝিঙে, চিচিঙ্গা, ধুন্দুল প্রভৃতি সবজি প্রতি কেজি ৬০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে সবজির মান ও বাজারভেদে দামে কিছুটা ভিন্নতা হতে পারে।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বর্তমানে শিম, ফুলকপি, লালশাকের মতো কিছু শীত মৌসুমের আগাম শাকসবজি বাজারে আসছে। যদিও এসব সবজির দাম এখন বেশি। যেমন প্রতি কেজি শিম এখন ১৪০–১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। শীতের মধ্যে শিমের দাম ৪০–৫০ টাকায় নেমে আসে। এদিকে বাজারে দীর্ঘদিন কম দামে আলু বিক্রি হচ্ছে। এ সপ্তাহে সে দাম কেজিতে আরও ২ টাকা কমেছে। তাতে আলুর কেজি হয়েছে ২০ টাকা। আর পেঁয়াজের কেজি আগের মতোই ৭৫-৮০ টাকা।
আরও পড়ুন<<>>কাঁচামরিচের ঝাল কমলেও বেড়েছে ডিমের দাম
সবজির পাশাপাশি বাজারে মাছের দামও চড়া। নিষেধাজ্ঞার কারণে বাজারে নেই ইলিশ মাছ। তবে চাষের রুই ও কাতলার দাম স্থিতিশীল থাকলেও বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে টেংরা, পাবদাসহ অন্যান্য মাছ। প্রতিকেজি বোয়াল আকারভেদে ৫০০ থেকে ৮৫০ টাকা, কোরাল ৬৫০ থেকে ৯০০ টাকা, আইড় ৫৫০ থেকে ৭৫০ টাকা, চাষের রুই, কাতল ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা, তেলাপিয়া ১৮০ থেকে ২২০ টাকা, পাঙাশ ২০০ টাকা, ট্যাংরা ৬০০ থেকে ৭৫০ টাকা, পাবদা ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা, শিং ৪৫০ থেকে ৬০০ টাকা, চিংড়ি ৬৫০ থেকে ৯০০ টাকা, শোল ৫৫০ থেকে ৮০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
বর্তমানে ফার্মের প্রতি ডজন বাদামি রঙের ডিম ১৪৮ থেকে ১৫০ টাকা ও সাদা রঙের ডিম ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা এক সপ্তাহ আগে যথাক্রমে ১৪০ ও ১৩৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। তবে ডিমের দাম বাড়লেও ব্রয়লার ও সোনালি মুরগির দাম বাড়েনি। আগের দরেই প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা ও সোনালি মুরগি ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
গরু ও খাসির মাংসের দামও অপরিবর্তিত রয়েছে। প্রতি কেজি গরুর মাংস ৭৬০-৮০০ টাকা, খাসির মাংস ১ হাজার ২০০ টাকা ও ছাগলের মাংস ১ হাজার ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
রাজধানীর বাজারে ভোজ্য তেল সয়াবিন ও পামঅয়েলের দাম বেড়েছে। এছাড়া গত এক সপ্তাহ ধরে ডিমের দাম বাড়তি। মাঝে সবজির দর কিছুটা কমলেও আবার দাম বেড়েছে। সব মিলিয়ে স্বস্তি নেই নিত্যপণ্যের বাজারে।
প্রতি পাঁচ লিটারের বোতলজাত সয়াবিনে ১০ টাকা বেড়ে ৯১০ থেকে ৯৩০ টাকা ও এক লিটারের বোতলজাত সয়াবিনে দুই টাকা বেড়ে ১৯০ থেকে ১৯৫ টাকা বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া, প্রতি লিটার পামঅয়েলে দুই টাকা বেড়ে ১৫৫ থেকে ১৬২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সরকারের বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) গতকাল তাদের বাজারদরের প্রতিবেদনে সয়াবিন ও পামঅয়েলের দাম বাড়ার বিষয়টি জানিয়েছে।
বাজার করতে আসা নাজিম উদ্দিন বলেন, একসঙ্গে সব কিছুর দাম বেশি হওয়ায় মাসের খরচ মেলানো কঠিন হয়ে পড়েছে। তবে বিক্রেতারা বলছেন, সরবরাহ স্বাভাবিক হলে দাম কিছুটা কমতে পারে আগামী সপ্তাহে।
এদিকে বাজারে চালের দামে কিছুটা নিম্নমুখী প্রবণতা দেখা গেছে। রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতি কেজি মিনিকেট ৭০–৮০ টাকা, নাজির ৭০–৮৫ টাকা, ব্রি–২৮ চাল ৫৬–৫৮ টাকা ও মোটা (স্বর্ণা) চাল ৫২–৫৪ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এদের মধ্যে গত ১৫ দিনে ব্রি–২৮, নাজির ও মোটা চালের দাম কেজিতে ২ টাকা কমেছে।
আপন দেশ/জেডআই
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।




































