ফাইল ছবি
সপ্তাহের ব্যবধানে আবারো চড়া রাজধানীর নিত্যপণ্যের বাজার। দাম বেড়েছে শাক-সবজি ও মাছ-মাংসসহ প্রায় সব ধরনের পণ্যেরই। ক্রেতা-বিক্রেতারা বলছেন, অস্থির বাজার নিয়ন্ত্রণে শুধু আমদানি শুল্ক কমালেই চলবে না, এর পাশাপাশি বাজার মনিটরিং জোরদার করতে।
ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রয়েছে। আর দেশে মুড়ি কাটা পেঁয়াজের মৌসুমও শেষ। সেই সঙ্গে হালি পেঁয়াজের ভরপুর মৌসুম শুরু হতে আরও কিছুদিন বাকি। এরই মধ্যে আরেক দফায় বেড়েছে পেঁয়াজের দাম।
গত দুদিনে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ২০ টাকা। ঢাকার বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা দরে, যা ছিল ১০০ টাকা। আর গত এক সপ্তাহে বেড়েছে ৪০ টাকা। তার আগের সপ্তাহে কেজি ছিল ৮০ টাকার মধ্যে।
অথচ বিগত বছরগুলোতে এ সময়ে পেঁয়াজের দর ছিল ৩০ থেকে ৩৫ টাকার মধ্যে। চড়া দামে পেঁয়াজ কিনতে বিরক্ত ক্রেতারা।
এদিকে বেড়েই চলেছে মাছ-মাংসের দাম। স্বস্তি নেই সবজির বাজারেও। তবে সরবরাহ বাড়ায় কিছুটা কমেছে আলু ও টমেটোর দাম। এ ছাড়া অন্যান্য শীতকালীন সবজির দাম এখনো ক্রেতাদের নাগালের বাইরে।
আজ শুক্রবার (৯ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এসব চিত্র দেখা গেছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, শীতের শেষ সময়ে বাজারের চাহিদা অনুযায়ী সবজির জোগান কম, গাড়ি ভাড়া বেশি হওয়ায় দাম বাড়ছে সব রকমের সবজির। তবে টমেটো আর আলুর দাম কমেছে।
অন্যদিকে বাজারে কমেনি ফার্মের মুরগির ডিমের দাম। বাজারভেদে বিক্রি হচ্ছে প্রতি ডজন ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা দরে। যা দুই সপ্তাহ আগে আরও ১০-১৫ টাকা কম ছিল। একই ভাবে কিছুটা বাড়তি দামে ব্রয়লার মুরগি ২১০ থেকে ২২০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।
রোজার এখনও বাকি প্রায় মাস খানেকের বেশি সময়। এর মধ্যেই বাড়তে শুরু করেছে আটা-ময়দা, ডাল-ছোলা, চিনি, ভোজ্যতেল ও খেজুরের দাম। দাম নিয়ন্ত্রণে চিনি, ভোজ্যতেল ও খেজুরের আমদানি শুল্ক কমিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। তবে ব্যবসায়ীদের দাবি, শুল্ক আরও আগে কমানো উচিত ছিল।
আরও পড়ুন <> মূল্যস্ফীতির চাপে তহবিল বন্ধ করলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক
এদিকে, রাজধানীর ফলের বাজার ঘুরে দেখা যায়, বাজারে প্রতি কেজি দাবাস খেজুর ৪৫০ থেকে ৪৮০ টাকা, জিহাদি খেজুর ২৪০ টাকা, আজওয়া খেজুর ৯০০ টাকা, বরই খেজুর ৪০০ টাকা, মরিয়ম খেজুর ৯০০ টাকা ও মেডজুল খেজুর বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৩০০ টাকায়। বিক্রেতারা বলছেন, আসন্ন রমজানকে কেন্দ্র করে বাড়ছে খেজুরের চাহিদা; এতে বাড়ছে দামও।
দাম বৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে মসলার বাজারেও। গত এক মাসের ব্যবধানে এলাচ-লবঙ্গের দাম কেজিতে বেড়েছে ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা। গোলমরিচ ও দারুচিনির দামও বাড়তি। এর কারণ জানেন না খোদ বিক্রেতারাও। তাদের দাবি, আমদানিকারকদের কারসাজিতেই বাড়ছে দাম।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে থেকেই অস্থির হতে শুরু করে দেশের চালের বাজার। নির্বাচনের পর দাম আরও বেড়ে যায়। এরপরই চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে মাঠে নামে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর, খাদ্য অধিদফতরসহ সরকারে নানা সংস্থা। এতে সামান্য কমে দাম। তবে দাম যতটা বেড়েছে, তার তুলনায় কমেছে সামান্য। খুচরা পর্যায়ে চালভেদে কেজিতে কেউ কেউ এক-দুই টাকা কম রাখলেও বেশির ভাগ বিক্রেতা আগের বাড়তি দামেই চাল বিক্রি করছেন।বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি বিআর-২৮ ও পাইজাম ৫৬ খেকে ৬০ টাকা, স্বর্ণা ৫৩ থেকে ৫৫ টাকা, নাজিরশাইল ৭৮ থেকে ৮৪ টাকা, চিনিগুঁড়া চাল ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা ও মিনিকেট ৭০ থেকে ৭২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
কারওয়ান বাজারে পাইকারি পেঁয়াজ ব্যবসায়ী মকবুল হোসেন বলেন, ‘গত বুধবার রাতে পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের কেজি ছিল ৭৮ থেকে ৮২ টাকা। বৃহস্পতিবার সকালেই কেজিতে ১৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হয়েছে ৯৩ থেকে ৯৭ টাকা পর্যন্ত। মূলত পাইকারি বাজারে দর বাড়ার কারণে খুচরা বাজারে এর প্রভাব পড়েছে।’
মগবাজারে নিত্যপণ্য কিনতে আসা ক্রেতা মোস্তফা বলেন, ‘শীতের মৌসুমে আমরা অতিরিক্ত বাড়তি দামে সব ধরনের সবজি কিনেছি। আগে কোন বছরেও সবজির দাম এতটা বেশি ছিল না। সব পণ্যের দামই চড়া।’
মহাখালীর কাঁচা বাজারে ক্রেতা হাবিবুর রহমান বলেন, এবার শীতের মৌসুমে অর্থাৎ যে সময় সবজির ভরা মৌসুম ছিল তখন আমরা অতিরিক্ত বাড়তি দামে সব ধরনের সবজি কিনেছি। আগে কোন বছরেও সবজির দাম এতটা বেশি ছিল না। তবে কী কারণে এই সময় সবজির দাম এত বাড়তি গেল তা আমার মতো সাধারণ ক্রেতাদের জানা নেই। এর পাশাপাশি বাজার মনিটরিংয়ের কোনো উদ্যোগ দেখিনি।
তিনি আরও বলেন, গত সপ্তাহেও সবজির দাম অনেক বেশি ছিল, সে তুলনায় আজকের বাজারে সবজিগুলোর দাম অল্প কিছু করে কমেছে। তবে সেই কমা একেবারে খুব বেশি নয়, পাঁচ থেকে ১০ টাকা করে প্রতিটি সবজির দাম কমেছে। কিন্তু এই সময় সবজিগুলোর দাম আরও কম হওয়া উচিত ছিল।
কারওয়ান বাজারের বরিশাল রাইস এজেন্সির আল হাসিব বলেন, নতুন করে বাড়েনি চালের দাম। তবে মিল-মালিকদের সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ না করতে পারলে আবারও বাড়তে পারে চালের দাম।
নিত্যপণ্যের এ অস্থির বাজার নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত বাজার মনিটরিংয়ের দাবি ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়েরই। ক্রেতারা বলছেন, নিয়মিত বাজার মনিটরিং করা হয় না। এতে বিক্রেতারা ইচ্ছেমতো দাম বাড়ানোর সুযোগ পায়।
বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু বলেন, এবার দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে স্বাভাবিক আইন প্রয়োগ করেই বাজার মনিটরিং জোরদার করা হবে। প্রয়োজন হলে জরুরি আইন প্রয়োগ করা হবে।
এদিকে রমজানে কম লাভে পণ্য বিক্রি করতে ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী মো. আব্দুর রহমান। তিনি বলেন, প্রান্তিক জনগোষ্ঠী ও স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য ভ্রাম্যমাণ পদ্ধতিতে ট্রাকে করে সুলভ মূল্যে মাছ, মাংস, দুধ, ডিম বিক্রির ব্যবস্থা করা হবে।
আপন দেশ/এমআর
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।