
ছবি: আপন দেশ
তিন যুগ পর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু), হল সংসদ ও সিনেটে ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচন। প্রচারণা শেষ হতে আর মাত্র দুই দিন বাকি। ক্যাম্পাস জুড়ে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতির উত্তাপ এখন তুঙ্গে।
বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বহুল প্রতীক্ষিত রাকসু নির্বাচন। নির্বাচনকে ঘিরে ইতোমধ্যেই প্রায় সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। নির্বাচনের দিন নিরাপত্তার জন্য থাকবে তিন স্তরের নিরাপত্তা বেষ্টনী। ক্যাম্পাসে দুই হাজারের বেশি পুলিশ সদস্যের পাশাপাশি ৬ প্লাটুন বিজিবি ও ১২ প্লাটুন র্যাব মোতায়েন থাকবে।
এছাড়া গোয়েন্দা সংস্থা, বিএনসিসি ও স্কাউট সদস্যরাও নিরাপত্তা কার্যক্রমে অংশ নেবেন। প্রশাসনের দাবি, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
একজন ভোটারকে রাকসু নির্বাচনে মোট ২৩টি পদে, হল সংসদ নির্বাচনে ১৫টি পদে ও সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনে ৫টি পদে মিলিয়ে মোট ৪৩টি ভোট দিতে পারবে। এসব ভোট দিতে ভোটার সময় পাবেন ১০ মিনিট। ফলে গড়ে প্রায় ১৪ সেকেন্ডে একটি করে ভোট দিতে হবে ভোটারকে। সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত লাইনে দাঁড়ানো ভোটাররা ভোট দিতে পারবেন।
আরও পড়ুন>>>রাবির ইতিহাস বিভাগে ২ ছাত্রলীগ নেতার স্ত্রী নিয়োগ পাওয়ার অভিযোগ
এদিকে ১৭টি হলের জন্য ৯টি ভবনে ১৭টি ভোটকেন্দ্র প্রস্তুতের কাজ শুরু হয়েছে। এসব কেন্দ্রে স্থাপন করা হবে মোট ৯৯০টি বুথ। ব্যালট পেপার হিসেবে ব্যবহৃত হবে ওএমআর শিট। যা গণনার জন্য ঢাকা থেকে আনা হয়েছে ছয়টি বিশেষ মেশিন।
নির্বাচন উপলক্ষে আগামী বুধবার ও বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ক্লাস ও পরীক্ষা স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। প্রচারণা শেষ হবে মঙ্গলবার রাত ১২টায়। বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলবে ভোটগ্রহণ। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের হিসাব অনুযায়ী, ২৮ হাজার ৯০১ জন ভোটারের ভোট গণনায় সময় লাগবে অন্তত ১৫ ঘণ্টা।
প্রার্থীরা বলছেন, দুই দফার প্রচারণাতেই নির্বাচনী পরিবেশ মোটামুটি ভালো ছিল। এখন পর্যন্ত কোনো বড় ধরনের অভিযোগ বা অঘটন ঘটেনি। একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও ঐতিহাসিক রাকসু নির্বাচনের প্রত্যাশায় তারা এখনো মাঠে সক্রিয় রয়েছেন।
সোমবার (১৩ অক্টোবর) সরেজমিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন মার্কেট, আম চত্বর, টুকিটাকি চত্বর, স্টেশন বাজার ও অ্যাকাডেমিক ভবনগুলোর সামনে ঘুরে দেখা যায় প্রার্থীরা সকাল থেকে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। ভোটারদের কাছে ছুটে গিয়ে বিলি করছেন লিফলেট, বুকমার্ক। দিচ্ছেন বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি।
শেষ মুহূর্তে ভোটারদের সাড়া কেমন পাচ্ছেন? প্রশ্নের জবাবে ছাত্রদল সমর্থিত 'ঐক্যবদ্ধ নতুন প্রজন্ম' প্যানেলের ভিপি প্রার্থী শেখ নূর উদ্দীন আবির বলেন, আমাদের প্যানেল এর বৈচিত্র্যতা নিয়ে শিক্ষার্থীরা ব্যাপক সাড়া দিচ্ছেন। বিশেষ করে প্রথম বর্ষের শিক্ষারা আমাদের অনেক ভালোভাবে গ্রহণ করছেন। কারণ তাদেরকে ভোটার তালিকায় যুক্ত করতে আমরা আন্দোলন করেছিলাম৷আমরা আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি শিক্ষার্থীদের কাছে পৌছানোর। যাদের কাছে গিয়েছি তারা আমাদের ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন।
সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোটের জিএস প্রার্থী ফাহিম রেজা বলেন, আমাদের ক্যাম্পাসের অধিকাংশ শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসের বাইরে থাকে। তাই আমরা হলে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি মেসে শিক্ষার্থীদের ডোর টু ডোর গিয়ে তাদের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি। শেষ মুহূর্তে এসে প্রত্যেকটি হলের আবাসিক অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের দাওয়াত দেয়ার মাধ্যমে প্রজেকশন মিটিং করতেছি। এ প্রজেকশন মিটিং গুলোতে যা আমরা আশা করেছি তার থেকে বেশি ভালোবাসা পেয়েছি। এগুলো আমাদের অনুপ্রেরণা দিচ্ছে। শিক্ষার্থীরা আমাদের খুবই ভালোভাবে নিচ্ছে। আমরা আশা রাখছি তারা যে আমাদের উৎসাহ দিচ্ছে ভালোবাসা দিচ্ছে এর ফল আমরা ১৬ তারিখে পাব। ১৬ তারিখে তারা ভোটের মাধ্যমে আমাদেরকে বিজয়ী করবে।
তিনি আরও বলেন, ১৫ বছরের ফ্যাসিবাদী আমলে কেউ ভোট দিতে পারেনি। তাই অনেকে জীবনের প্রথম ভোট হিসেবে রাকসুতে ভোট দেবেন— এটি আমাদের জন্য আনন্দের বিষয়। আমাদের ক্যাম্পাসের সবচেয়ে বড় সমস্যা আবাসন। বর্তমানে মাত্র ৩৬ শতাংশ শিক্ষার্থী আবাসনের সুযোগ পাচ্ছে। আমরা মনে করি রাজনৈতিক কারণে এ সমস্যা রয়ে গেছে। তাই আমাদের প্রথম ম্যান্ডেট হবে পূর্ণাঙ্গ আবাসন নিশ্চিত করা ও অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের জন্য আবাসিক ভাতার ব্যবস্থা করা।
পুলিশের নিরাপত্তা বেষ্টনী সম্পর্কে আরএমপি কমিশনার আবু সুফিয়ান বলেন, ভোটের দিন নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কী ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হবে তা নিয়ে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করেছি। ভোটগ্রহণ থেকে ফলাফল ঘোষণার পুরো প্রক্রিয়া পর্যন্ত আমরা সর্বোচ্চ সতর্কতা বজায় রাখবো। বিশ্ববিদ্যালয়ের খোলা জায়গা ও কেন্দ্রগুলোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েও বিশেষভাবে আলোচনা হয়েছে।
আরএমপি কমিশনার আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশে কিছু বস্তি এলাকা রয়েছে, যেখানে মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের উপস্থিতি থাকতে পারে বলে আমরা মনে করছি। সে এলাকাগুলোতেও তল্লাশি চালানো হবে। এছাড়া, আবাসিক হলে যেন কোনো বহিরাগত অবস্থান না করে সে বিষয়েও আমরা নজরদারি করছি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মাহবুবর রহমান বলেন, আমরা চাই সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। এজন্য তিন বাহিনীর সঙ্গে আমাদের নিয়মিত সমন্বয় হচ্ছে। হলগুলোতে যাতে কোনো বহিরাগত না থাকে বা কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না হয়, সেজন্য তল্লাশি কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। এখন পর্যন্ত কোনো সন্দেহজনক কিছু পাওয়া যায়নি।
নির্বাচনের সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. এফ. নজরুল ইসলাম বলেন, নির্বাচনের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে দুই হাজার পুলিশ সদস্যের পাশাপাশি র্যাব ও বিজিবি মোতায়েন থাকবে। নির্বাচন কমিশনের একটি বিশেষ টিমও মাঠে কাজ করবে; কোনো প্রার্থী বা প্যানেল আচরণবিধি ভঙ্গ করলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আপন দেশ/এমবি
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।