Apan Desh | আপন দেশ

উদ্বোধনের আগেই সাগরে বিলীন ৫ কোটি টাকার মেরিন ড্রাইভ

পটুয়াখালী প্রতিনিধি 

প্রকাশিত: ০৮:৫২, ২৯ জুলাই ২০২৫

আপডেট: ০৯:১১, ২৯ জুলাই ২০২৫

উদ্বোধনের আগেই সাগরে বিলীন ৫ কোটি টাকার মেরিন ড্রাইভ

কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে মেরিন ড্রাইভ সড়কের বিভিন্ন অংশ লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে

পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতের পাশে নির্মিত প্রায় ৫ কোটি টাকার মেরিন ড্রাইভ সড়কের বিভিন্ন অংশ উদ্বোধনের আগেই সাগরে বিলীন হয়ে গেছে। এ সড়কের অর্ধেকের বেশি এখন ঝুঁকিতে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন পর্যটকরা, বিপাকে পড়েছেন স্থানীয় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। স্থানীয়দের অভিযোগ, পরিকল্পনাহীনতা, নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী এবং স্বজনপ্রীতিমূলক ঠিকাদার নিয়োগের কারণেই এ ধ্বংস। এছাড়া ঘূর্ণিঝড় ‘শক্তি’ ও সাম্প্রতিক জোয়ারের ঢেউয়ে সড়কটির বেশিরভাগই ধসে পড়েছে।

স্থানীয় প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, অমাবস্যার জোয়ার ও সাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে বড় বড় ঢেউ আছড়ে পড়ছে উপকূলে। এতে মাত্র দুই দিনেই প্রায় দুই কিলোমিটার মেরিন ড্রাইভ সড়ক, গাইড ওয়াল, পাশের ওয়াকওয়ে এবং শুঁটকি মার্কেটের বেশ কয়েকটি দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

প্রায় পাঁচ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০২৪ সালে নির্মাণকাজ শেষ হলেও এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন হয়নি এ সড়ক। এর আগেই গত ২৯ মে ঘূর্ণিঝড় ‘শক্তি’র তাণ্ডবে সড়কের কিছু অংশ ভেঙে যায়। মাত্র দুই মাস না যেতেই ফের নিম্নচাপের প্রভাবে সৃষ্ট ঢেউয়ে বড় ধরনের ক্ষতি হলো।

স্থানীয় ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রুমান ইমতিয়াজ তুষার বলেন, প্রতি বছরই বর্ষায় সাগরের ঢেউয়ে ভাঙন হয়। এর পেছনে অপরিকল্পিত কাজ আর নিম্নমানের নির্মাণই দায়ী। এতে পর্যটক কমে আসে, স্থানীয় অর্থনীতিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবে সবচেয়ে বিপাকে পড়েছেন শুঁটকি ব্যবসায়ীরা। ঢেউয়ের তোড়ে অনেক দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। স্থানীয়দের আশঙ্কা, এভাবে চলতে থাকলে পর্যটননির্ভর অর্থনীতি আরও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

প্রথম দফার ভাঙনের পর কুয়াকাটা পৌর প্রশাসক ও কলাপাড়া উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ইয়াসিন সাদেককে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত প্রতিবেদন সাত কর্মদিবসের মধ্যে জমা দেয়ার কথা থাকলেও দুই মাসেও তা প্রকাশিত হয়নি।

স্থানীয় বাসিন্দা সোহেল বলেন, পরিকল্পনা ছাড়া সমুদ্র রক্ষার নামে প্রকল্প বাস্তবায়ন নিছক বোকামি। যারা এ প্রকল্পের অর্থ চেটেপুটে খেয়েছেন, তাদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনতে হবে।

এদিকে চলমান লঘুচাপ ও অমাবস্যার জোয়ারে সাগরের পানি আরও উত্তাল হয়ে উঠেছে। ফলে পুরো মেরিন ড্রাইভ, পার্শ্ববর্তী সবুজ বেষ্টনী, ট্যুরিস্ট পুলিশ বক্স ও ডিসি পার্কসহ সৈকতের একাধিক স্থাপনাও ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-প্রকৌশলী তরিকুল ইসলাম তুহিন বলেন, ভাঙন রোধে প্রাথমিকভাবে জিও টিউব ও জিও ব্যাগ ফেলার কাজ শুরু হয়েছে।

কুয়াকাটা পৌর প্রশাসক ইয়াসীন সাদেক জানান, ৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকার প্রকল্পে ১ কোটি ৭৬ লাখ টাকা বিল দেয়া হয়েছে। বাকি অর্থ দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত অংশ মেরামতের উদ্যোগ নেয়া হবে। এছাড়া, ডিসি পার্ক থেকে জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১ কিলোমিটার এলাকা রক্ষায় পানি উন্নয়ন বোর্ড ও পৌরসভার যৌথ উদ্যোগে একটি নতুন প্রকল্প নেয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, সাগরকন্যা খ্যাত ১৮ কিলোমিটার দীর্ঘ কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে প্রতিবছর লাখো পর্যটক সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখতে আসেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের একটি বড় অংশের জীবিকা এ পর্যটনের সঙ্গে জড়িত। সৈকত রক্ষায় দ্রুত ও টেকসই ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন স্থানীয়রা। দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।

আপন দেশ/এমএইচ
 

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়