Apan Desh | আপন দেশ

প্রলোভনের এ যুগে নিজেকে রক্ষা করবেন যেভাবে

আপন দেশ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৯:৪৫, ২ আগস্ট ২০২৫

প্রলোভনের এ যুগে নিজেকে রক্ষা করবেন যেভাবে

প্রতীকী ছবি

আধুনিক ফিতনার ঢেউয়ে নিজেকে পবিত্র ও সংযত রাখা সম্ভব? ইসলাম আমাদের হাতে দিয়েছে চাবিকাঠি—যা দিয়ে আমরা আত্মার দরজা বন্ধ করতে পারি শয়তানের প্রবেশ থেকে।

আজকের এ যুগে প্রলোভন যেন সর্বত্র। সোশ্যাল মিডিয়া থেকে শুরু করে অফিস, ক্যাম্পাস, এমনকি ঘরের ভেতরও—চোখে পড়ে যায় এমন কিছু যা অন্তরে অস্থিরতা সৃষ্টি করে। এমন বাস্তবতায় নিজেকে গুটিয়ে রাখা নয়, বরং ইসলাম আমাদের শেখায়—কিভাবে প্রকৃতির স্বাভাবিক প্রবৃত্তিকে অস্বীকার না করে, তা নিয়ন্ত্রণ ও সংযমের মাধ্যমে পরিশুদ্ধ জীবন যাপন করা যায়।

আসুন দেখে নিই কীভাবে প্রলোভনের এ যুগে একজন মুমিন নিজেকে রক্ষা করতে পারেন:


১. চোখের হেফাজত: দৃষ্টির সংযমই প্রথম রক্ষাকবচ

নবীজি (সা.) বলেন, ‘চোখ হলো শয়তানের তির।’ (মুস্তাদরাকে হাকিম, হাদিস: ৭৮৭২)

আজকের ডিজিটাল যুগে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয় আমাদের দৃষ্টি। সোশ্যাল মিডিয়া, বিজ্ঞাপন, ভিডিও কনটেন্ট—সবই চোখের সামনে একের পর এক ফিতনা উপস্থাপন করে। এর থেকে বাঁচতে চাইলে দরকার সচেতন দৃষ্টিনিয়ন্ত্রণ। চোখ নামিয়ে রাখা মানেই আত্মাকে উত্তপ্ত অগ্নি থেকে বাঁচানো।


২. যিকির ও কোরআন তিলাওয়াত: অন্তরের সুরক্ষা চাদর

প্রতিদিন অন্তত ৫ থেকে ১০ মিনিট কোরআন তিলাওয়াত সকালের শুরু ও রাতের শেষে কিছু সময় যিকিরের জন্য বরাদ্দ করুন। যেমন—সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহু আকবার। এসব যিকির আমাদের অন্তরে প্রশান্তি আনে। শয়তানের কুমন্ত্রণা দূরে রাখে।


৩. শরীরচর্চা ও সুষম রুটিন: চিন্তা ও প্রবৃত্তির ভারসাম্য

দিনে অন্তত ২০ মিনিট হাঁটা বা হালকা ব্যায়াম করলে শরীর যেমন সুস্থ থাকে, তেমনি মস্তিষ্ক ও মনও ভারসাম্য ধরে রাখে।

একঘেয়ে অনিয়মিত জীবনযাত্রা ও অলসতা—শয়তানকে সুযোগ করে দেয়। তাই সক্রিয় থাকুন, সময়সূচি মেনে চলুন।


৪. রোজা: আত্মসংযমের ঢাল

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন: ‘তোমাদের মধ্যে যে বিবাহ করার সামর্থ্য রাখে, সে যেন বিবাহ করে। আর যে সক্ষম নয়, সে যেন রোজা রাখে; কেননা এটি তার জন্য আত্মসংযম।’ (সহিহ বুখারি: ৫০৬৫, সহিহ মুসলিম: ১৪০০)

রোজা শুধু খাবার বর্জন নয়; এটি চোখ, মুখ, কান, হৃদয় সবকিছুকে সংযত রাখার প্রশিক্ষণ। অন্তত সপ্তাহে একদিন নফল রোজা রাখার অভ্যাস গড়লে অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা বাড়ে।


৫. বিবাহের প্রস্তুতি নেয়া

শুধু জৈবিক চাহিদা মেটাতে নয়, বরং দ্বীন রক্ষা, ভালোবাসা, দায়িত্ব ও পারিবারিক স্থিতির চিন্তা থেকেই বিয়ের সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত। তাড়াহুড়ো না করে, ধৈর্য ধরে অর্থনৈতিক ও মানসিক প্রস্তুতির মাধ্যমে পরিবারকে বোঝানো ও ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুতি নেয়া জরুরি।


৬. হতাশ না হয়ে আল্লাহর কাছে প্রত্যাবর্তন

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আমি প্রতিদিন আল্লাহর নিকট ৭০ বার (অথবা ১০০ বার) ক্ষমা প্রার্থনা করি।’ (সহিহ মুসলিম: ২৭০২)

একটি ভুল বারবার হয়ে গেলে হতাশ না হয়ে তাওবার দ্বারে ফিরে আসুন। প্রতিদিন কমপক্ষে ২০০ থেকে ৫০০ বার ‘আস্তাগফিরুল্লাহ’ বলুন। এ অভ্যাস হৃদয়ে আল্লাহভীতি ও আত্মসচেতনতা জাগ্রত করে।


৭. নিয়মিত এ চর্চাগুলো করুন-

  • চোখ, কান ও অন্তরের সংযম, শরীরচর্চা ও রুটিন মেনে চলা, রোজা ও তাহাজ্জুদের অভ্যাস, ভালো বই পড়া ও আত্মউন্নয়ন, নফল ইবাদতের মাধ্যমে সময় পূর্ণ রাখা, পরিবার ও ঘনিষ্ঠজনদের সঙ্গে খোলামেলা আলোচন, তাড়াহুড়ো না করে ভবিষ্যতের জন্য ধৈর্যসহ প্রস্তুতি


নৈতিকতা সংকটের এ সময়ে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। মনে রাখবেন, আপনি একা নন। আপনি একজন সংগ্রামী মুমিন। যিনি শয়তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছেন।

দোয়া করুন, দোয়া চেয়ে যান। আত্মাকে দোষ না দিয়ে বরং ইবাদত, দায়িত্ব ও সচেতন চেষ্টার মাধ্যমে নিরাপদ পথ খুঁজে বের করুন।

আপন দেশ/এমবি

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

সম্পর্কিত বিষয়:

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

Advertisement

জনপ্রিয়